মতামত

কৃষিই পারবে তবে...

‘মহামারি করোনাভাইরাসের পর যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে তার থেকে একমাত্র কৃষিই মানুষকে বাঁচাতে পারে’ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কথায় আছে পেটে গেলে পিঠে সয়। গতকাল সোমবার রাজশাহী বিভাগের আট জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। আমাদের মাটি অত্যন্ত ঊর্বর। আমাদের খাদ্যের যেন সমস্যা না হয়। ধান ওঠার পরপরই যেন ফসল আমরা ফলাতে পারি, কেউ যেন এক টুকরাও জমিও ফেলে না রাখে।

‘তরি-তরকারি, ফলমূল যে যা পারেন উৎপাদন করবেন। করোনা দুর্ভিক্ষের পর যে মহামারি দেখা দেবে সেখান থেকে যেন আমরা আমাদের দেশকে বাঁচাতে পারি’, বলেন শেখ হাসিনা।

এ সময় তিনি বলেন, প্রত্যেকে উদ্যোক্তা হন। এখন তো সবাই ঘরে বসে আছেন। কাজেই যে যেটুকু পারেন একটু গাছ লাগানো, বাগান করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিই একমাত্র মানুষকে বাঁচাতে পারবে। কারণ খাদ্যটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

করোনাভাইরাস সংকট চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে করোনাউত্তর পৃথিবী যে গভীর সংকটে নিপতিত হচ্ছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে।

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির ওপরই এদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিশেষ করে দেশের খাদ্যচাহিদা মেটাতে যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের দরকার হয় তা আসে কৃষিজমি থেকেই। কিন্তু দিন দিন এই জমি কমে যাচ্ছে। কৃষিজমির পরিমাণ এতটাই দ্রুত কমছে যে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের খাদ্যচাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধিই কৃষিজমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঘরবাড়ি। যার অধিকাংশ তৈরি হচ্ছে কৃষিজমিতে। এছাড়া জনসংখ্যা বাড়ার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য ক্ষেত্রে। নতুন রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ করতে হচ্ছে। বাড়ছে শিল্পকারখানা। এসবের জন্য কৃষিজমিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীভাঙনের ফলেও কৃষিজমি কমছে। এসব কারণে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষিজমি রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

সহযোগী একটি দৈনিকের এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, প্রতিবছর দেশে কৃষিজমি কমছে ৮২ হাজার হেক্টর, যা মোট জমির ১ শতাংশ। কৃষিশুমারি ১৯৮৪ ও ২০০৮-এর মধ্যে তুলনা থেকে দেখা যায়, চাষকৃত এলাকার পরিমাণ কমেছে সাত লাখ ৩৩ হাজার একর, অর্থাৎ ২৪ বছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃষিজমি যে হারে কমছে তাকে উদ্বেগজনক বলছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞের মতে, প্রতিবছর দেশের জনসংখ্যায় যোগ হওয়া নতুন মুখের জন্য সাড়ে তিন লাখ টন বাড়তি চালের দরকার হয়। একদিকে খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এবং অন্যদিকে কৃষিজমি কমে যাওয়া রীতিমতো উদ্বেগজনক ব্যাপার। এ অবস্থায় জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

Advertisement

সীমিত আয়তনের বাংলাদেশে জমি খুবই মূল্যবান; এখানে ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রতি ইঞ্চি জমি হিসাব করে ব্যবহার করতে হবে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ণের কারণে দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। আবাদি জমি কমে যাওয়ার কারণে বছরে ২০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন কম হচ্ছে। আবাদি জমি যেভাবে কমছে, তাতে দেশে আগামীতে খাদ্য নিরাপত্তা হমকির সম্মুখীন হবে।

তাই সারাদেশে জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতা দরকার। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেশে সংরক্ষিত কৃষিজমি ও বনভূমির পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে নগরায়ণ ও উন্নয়ন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/বিএ/জেআইএম