বরিশাল নগরীর বেসরকারি একটি ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা ও ভুল চিকিৎসায় সোনিয়া বেগম (২৪) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Advertisement
একই সঙ্গে ওই রোগীর মৃত্যু খবর গোপন করে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এমনকি রোগী মৃত্যুর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে ১২ হাজার টাকা চাওয়া হয় বলে মৃত নারীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড রোডের বেসরকারি ক্লিনিক রয়েল সিটি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত সোনিয়া বেগম (২৪) ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের প্রবাসী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। এ ঘটনায় সোনিয়ার মা রহিমা বেগম চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
Advertisement
রহিমা বেগমের অভিযোগ, ২০ এপ্রিল রয়েল সিটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন সোনিয়া। অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের চিকিৎসক তানিয়া। জ্ঞান ফেরার পর সোনিয়া পেটব্যথা হচ্ছে বলে জানান। তখন চিকিৎসক তানিয়া বলেন অস্ত্রোপচারের এমন ব্যথা হচ্ছে। পরে ঠিক হয়ে যাবে। ২৩ এপ্রিল ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। চিকিৎসক তানিয়াকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন সোনিয়ার নাড়িতে প্যাঁচ পড়েছে। তার আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। সোমবার সকাল ৮টায় অপারেশনের সময় নির্ধারণ করা হয়। এবার অস্ত্রোপচার করেন তানিয়ার স্বামী চিকিৎসক মনিরুল আহসান।
রহিমা বেগম বলেন, দুপুর ২টার দিকে অস্ত্রোপচার শেষে জানানো হয় রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন। দ্রুত কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। এতে খরচ আসবে ১২ হাজার টাকা। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে না চাইলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রোগীর অবস্থা খারাপ।
রহিমা বেগম বলেন, এরপর দ্রুত আমরা সোনিয়াকে শের-ই-বাংলা মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সোনিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলেন রোগীতো অনেক আগেই মারা গেছে। এরপর সোনিয়ার মরদেহ নিয়ে রয়েল সিটি হাসপাতালে আসি। তখন রয়েল সিটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আমাদের সামনে আসেনি। বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। এরপর আমরা সোনিয়ার মরদেহ নিয়ে চলে আসি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
মৃতের স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিকিৎসক তানিয়া ও চিকিৎসক মনিরুল আহসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
Advertisement
তবে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আফরোজা বলেন, আমাদের হাসপাতালে কোনো অব্যবস্থাপনা হয়নি। রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আর ওই রোগেীর মৃত্যু আমাদের ক্লিনিকে হয়নি।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সোনিয়ার স্বজন এবং ক্লিনিকের দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলেছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
সাইফ আমীন/এএম/পিআর