কোভিড- ১৯ মহামারিতে দেশের সব নাগরিক লকডাউনের আওতায় স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী। এমতাবস্থায় দৈনন্দিন কার্যক্রম যেমন অফিস, চিকিৎসা, যোগাযোগ, অর্থ লেনদেন, কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা অনলাইনভিত্তিক। সরকার এই সেবাকে জরুরি সেবা হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে সব কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে করতে বলছেন। অথচ এই অনলাইন সেবা থেকে দেশের ৫০ শতাংশ নাগরিক বঞ্চিত হচ্ছেন।
Advertisement
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। সরকার ও বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শ ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন ভিত্তিক লেখাপড়া করতে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ নাগরিক যখন অনলাইন সেবা থেকে বঞ্চিত তাহলে কিভাবে দেশের সব শিক্ষার্থী অনলাইন সেবা পাবে এটি অবশ্যই একটি প্রশ্নের বিষয়।
আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায় দেশের ১৭ কোটি নাগরিককে সেবা দেয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং গ্রাহকদের সামর্থ্য ও সক্ষমতা দু’টোরই ঘাটতি রয়েছে। বর্তমান দেশের প্রায় ১৬ কোটি সিম সক্রিয় রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। তার মধ্যে মুঠোফোন ভিত্তিক ব্যবহাকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ২৫ লক্ষ, বাকিরা ব্রডব্যান্ড ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। দেশের অধিকাংশ নাগরিকের হাতেই স্মাটফোন নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ৫০ শতাংশ নাগরিক অনলাইন সেবা থেকে বঞ্চিত।
এই অপারেটরদের সক্ষমতার দিকে তাকালে দেখা যাবে ২০ লক্ষ গ্রাহককে সেবা দিতে এক মেগাহার্জ তরঙ্গ ব্যবহার করছে। এমন অনেক দেশ আছে যেখানে ১ কোটি গ্রাহককে সেবা দিতে ৬০ থেকে ১০০ মেগাহার্জ তরঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। অল্প তরঙ্গ ব্যবহার করে সেবা দেয়ার ফলে সেবার মান কী হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। ধীরগতির ইন্টারনেটের ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ফোর-জি তো দূরে থাক, থ্রি-জি পাওয়াই দুস্কর হয়ে পড়েছে। ডেটার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার ধীরগতি, গ্রাহককে চরম ভোগান্তিতে ফেলছে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে হয়তো নাগরিকদের দেহ রক্ষা করা যাবে কিন্তু জাতি মেধাশূন্য হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্য চারদফা প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। তাদের দফাগুলো হলো- প্রথমত, সবার জন্য অনলাইন সেবা প্রপ্তির বিকল্প নেই। এর জন্য করণীয় সবার আগে রাস্তা নির্মাণ করা। অর্থাৎ অধিক তরঙ্গ ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, মোবাইল ডিভাইস প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা দূর করে অপারেটরদের মাধ্যমে সহজ কিস্তির মাধ্যমে জামানতবিহীনভাবে গ্রাহকের হাতে পৌঁছানো। তৃতীয়ত, আইএসপি অপারেটরদের ফিক্সড ইন্টারনেট প্রদানের ক্ষেত্রে জামানতবিহীন সংযোগ প্রদান করা। সেই সঙ্গে প্রতিটি সংযোগে মাসিক চার্জ সর্বোচ্চ ২০০ টাকার অতিরিক্ত না নেয়া। চতুর্থত, প্রতিটি স্কুল-কলেজকে অনলাইন সেবার আওতায় আনা। সেই সঙ্গে প্রতিটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীর যোগাযোগ নিশ্চিত করে শ্রেণি ক্লাস ও পরীক্ষা নিশ্চিত করা।
Advertisement
আমরা পূর্বে দাবি করেছিলাম, শর্ত সাপেক্ষে বিনামূল্যে অপারেটরদের তরঙ্গ বরাদ্দ করা। ইতোমধ্যে রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক ৩ মাসের জন্য ফ্রি তরঙ্গ চেয়ে আবেদন করেছে। অন্যদিকে জিপি সাশ্রয়ী মূল্যে তরঙ্গ কিনতে আবেদন করেছে। দুটি আবেদনের মূল্যায়ন আলাদাভাবে করা যেতে পারে। জিপি যেহেতু প্রান্তিকে এবং এই দুর্যোগময় সময়েও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে তাই তাকে স্বল্পমূল্যে তরঙ্গ বরাদ্দ করার প্রস্তাব করছি। এর মাধ্যমে প্রায় ৫/১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে। অন্যদিকে যদি তাদের কাছে বকেয়া ১১ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যায় তাহলে এদিয়েই প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার করোনা তহবিল গঠন করা সম্ভব। অন্যদিকে বাকি ৩ অপারেটরকে শর্ত সাপেক্ষে ফ্রিতে তরঙ্গ বরাদ্দ করার জন্যও আহ্বান জানাচ্ছি। এতে করে দেশের ১৭ কোটি মানুষকে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা ও শতভাগ অনলাইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এএস/এমএফ/পিআর