করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে কার্যত লকডাউন সারাদেশ। এক মাস ধরে ঘরবন্দি মানুষ। নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। কবে নাগাদ শেষ হবে করোনা দুর্যোগ তা জানা নেই কারও।
Advertisement
সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন অনেকেই। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে দিচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। আবার কেউ কেউ করছেন ত্রাণ চুরি।
ত্রাণ চুরিতে অনেক জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। ত্রাণ চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইতোমধ্যে ৩৫ জন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জাতীয় এই দুর্যোগে যখন জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ চুরিতে ব্যস্ত তখন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিরল দৃষ্টান্ত দেখালেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি।
তার নাম মিলন রবিদাস (৩৭)। তিনি মূলত একজন মুচি। জুতা সেলাই করে সংসার চলে তার। সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন ভূঁইয়ার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন রবিদাস।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভাবের কারণে পঞ্চম শ্রেণিতেই পড়ালেখার পাঠ চুকে যায় রবিদাসের। প্রায় ২০ বছর আগে মারা যান বাবা মতিলাল। এরপর বাবার পেশাকে আঁকড়ে ধরে সংসারের ঘানি টানতে শুরু করেন রবিদাস। মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের পাশে জুতা সেলাইয়ের দোকান দিয়ে বসেন তিনি। যেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে জেঠার জমিতে বসবাস করছেন। মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে এবং ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। অভাব-অনটনের মাঝেও দুই শতাংশ জমি কিনেছেন রবিদাস। কিন্তু বাড়িঘর বানানো হয়নি এখনও তার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিলন রবিদাস জাগো নিউজকে বলেন, দেশে অনেক সময় অনেক দুর্যোগ দেখেছি। আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশের দুর্যোগে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার। করোনার মহামারি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। জুতা সেলাই করে কিছু টাকা জমিয়েছি ঘর করার জন্য। কিন্তু করোনার দুর্যোগে না খেয়ে থাকা মানুষের কষ্ট দেখে ঘর করার ইচ্ছা মরে গেল। দীর্ঘদিনের জমানো ২০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়ে দিলাম আমি। আশা করি, এতে একটু হলেও দরিদ্র মানুষের উপকার হবে।
জিতু কবীর/এএম/এমকেএইচ
Advertisement