বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলের মিষ্টি কুমড়া ও শসা চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন। বৃষ্টিতে মিষ্টি কুমড়ায় পচন ধরছে এবং শসা গাছের গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে করোনার কারণে বিক্রি করতে না পেরে অনেকের ফলন খেতেই পচছে।
Advertisement
বৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়া একজন চাষি ঠাকুরগাঁও সদরের রশিদুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি তিন বিঘায় মিষ্টি কুমড়া লাগাইছি। হবে না, কারণ বৃষ্টি-বর্ষা। ফল ধরছে। কিন্তু ফলগুলো টিকতেছে না পানির জন্য। পঁচে যাচ্ছে। আমাদের খেতে প্রায় এক হাঁটু সমান পানি। মনে হয় বর্ষাকাল।’
তিনি বলেন, ‘আমার তিন বিঘায় প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। ১২ হাজার টাকার বেশি খরচ করে এক কেজি মিষ্টি কুমড়ার বিচি কিনতে হইছে। অনেক টাকা লস হবে। কিন্তু এখনও বিক্রি করতে পারি নাই।’
ওই অঞ্চলের চিত্র তুলে ধরে রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কান্দরে (ফসলি এলাকা) তো মনে করেন, ২০ থেকে ২৫ বিঘায় প্রায় সবাই লাগাইছে মিষ্টি কুমড়া। কিন্তু ফল তো টিকবে না। অনেকে টমেটো বাজারজাত করতে পারে নাই করোনার জন্য। শসা যারা লাগাইছে, এখন শসা উঠবে। কিন্তু বর্ষার জন্যে গাছ তো টিকবে না। অনেকেই এই সমস্যার মধ্যে আছে।’
Advertisement
শসা চাষ করে বর্ষায় ক্ষতির মুখে পড়তে যাওয়া আরেকজন কৃষক ঠাকুরগাঁও সদরের আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের শসা খেত একদম বৃষ্টিতে ডুবে গেছে। গাছের গোড়া ডুবে গেলে মারা যায়। এগুলো এখন আর হবে না। আস্তে আস্তে গাছগুলো সব লাল হয়ে যাবে। আমরা পানি সরানোর চেষ্টা করছি। পানি সরাতে পারলে গাছগুলো বাঁচার সম্ভাবনা আছে। পুকুরে পানি ফেলছি। আবার যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে বাঁচানো যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাঙায় (উঁচু জায়গায়) যারা শসা করেছে, তাদেরগুলো ভালো আছে। কিন্তু আমাদের জমি একটু নিচু। শসা খেতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। এ পর্যন্ত কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু শসা গাছের যে চেহারা, তাতে ফলন ধরলে প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মণ করে শসা বিক্রি করতে পারব। কিন্তু ফলই তো হলো না। ফল দেয়ার আগেই তো সব বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণত বৈশাখে তো এত বৃষ্টি হয় না, দুই থেকে তিনবার হয়। এবার প্রায় বন্যা হয়ে গেছে। প্রায় ৬-৭ দিন ধরে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে।’
আবু বক্কর সিদ্দিককের আবাদ করা মিষ্টি কুমড়ারও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মিষ্টি কুমড়ারও একই অবস্থা। খেত ডুবে গেছে। মিষ্টি কুমড়া তো কান্দরটা (অনেক ফসলি এলাকা) ধরেই। মিষ্টি কুমড়া প্রচুর লোক করেছে। মিষ্টি কুমড়া গাছ অনেকের ডুবে গেছে। পানিতে মিষ্টি কুমড়া হয় না, পচে যায়।
Advertisement
অন্যদিকে করোনার কারণে বিক্রি করতে না পেরে ক্ষেতেই টমেটো নষ্ট হয়েছে আবু বক্করদের। তিনি বলেন, ‘টমেটোর জাঙ্গলা ফালাই দিছি। টমেটো বিক্রিই করতে পারি নাই। দামই তো নাই। টমেটো তো কেউ কিনেই না। বাজার নাই, হাট নাই, কিছুই নাই। কেউ যে দাম বলবে, তাও তো বলে না।’
পিডি/এসআর/জেআইএম