করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য পুরো দেশকে যেদিন (১৬ এপ্রিল) ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর, সেদিনই ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- যেখানে নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক করোনা পরীক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পিসিআর ল্যাব এবং এন-৯৫ মাস্ক চাইলে তিনি অবাক হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অবাক হচ্ছি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অধ্যুষিত বন্দরনগরী ও জনবহুল নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোনো গবেষণাগার নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর এই অবাক হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার বেহাল দশার একটি চিত্র ফুটে ওঠে- যা বেশ প্রকট আকারে প্রকাশিত হয়েছে করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই।
Advertisement
নারায়ণগঞ্জের ওই চিকিৎসক জানান, তার হাসপাতালে একটিও এন-৯৫ মাস্ক দেয়া হয়নি। সুরক্ষিত এন-৯৫ মাস্ক না ব্যবহার করে চিকিৎসা দেয়ার কারণে তাদের হাসপাতালে ১৬ জন চিকিৎসক কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। এখন প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্যমন্ত্রী শুরু থেকেই যে বলে আসছিলেন করোনা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন- এই তার চিত্র? করোনার কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার একটি বড় হাসপাতালে একটিও এন-৯৫ মাস্ক যে পাঠানো হলো না, তাতে কী প্রমাণিত হয়? অবশ্য স্বাস্থ্য সচিব এর একটি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে, এন-৯৫ মাস্কের কোনো সরবরাহ নেই। তবে এর কাছাকাছি মানের মাস্ক চীন ও জাপানে তৈরি হয়। সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের স্বাস্থ্যখাত শুরু থেকেই একটি বিশাল মাফিয়াচক্রের হাতে বন্দি। স্বাস্থ্যখাতে জনবান্ধব নীতির অভাবে এটি চলে গেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর হাতে। আর সরকারি হাসপাতালগুলোয়ও রয়েছে এক বিশাল দুষ্টচক্র যারা বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের সাথে যুক্ত। যখনই যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তাদের লোকজনও এই চক্রের সাথে যুক্ত থাকেন। ফলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কাছাকাছি এসেও দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে জনাবন্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি- যা আরও একবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল করোনা পরিস্থিতি।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে শুরু থেকেই নানা ধরনের সমলোচনা হচ্ছে। করোনা উপসর্গ আছে এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য যেসব হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং যেসব স্থানে নমুনা পরীক্ষা করা হয়, সেসব জায়গার ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার খবর এরইমধ্যে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে একজন চিকিৎসকের মৃত্যুর পর এবং আরও অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার বিষয়টি আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে। কোনো কোনো চিকিৎসক ফেসবুকে এমনও লিখেছেন যে, তিনি খুন হতে চান না। অর্থাৎ ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যুকে তারা ‘হত্যাকাণ্ড’ বলছেন। কারণ সিলেট থেকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আসতে তিনি সরকারের কাছে যে সহায়তা চেয়ছিলেন, তা তিনি পাননি।
Advertisement
শারমিন আখতার চৌধুরী নামে মিটফোর্ড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ফেসবুকে লিছেছেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন নকল পিপিই ও নকল মাস্ক পরে আমরা যোদ্ধার মতো করোনা ঠেকিয়ে দেব, তবে আপনারা ভুল ভাববেন। আমাদের পরিবার আছে, সন্তান আছে। প্রতিটা দিন আমরা আতঙ্কে পার করছি। মানসিকভাবে ভয়াবহ বিপর্যস্ত। দুদিন হলো পরিবার ও বাচ্চা থেকে দূরে থাকছি। নিজের সাথে যুদ্ধ করে সময় পার করছি। একটা রোডে যদি একটা পেশেন্ট পাওয়া যায় তবুও সেই জায়গা লকডাউন হয়। আমাদের সিস্টার, ডাক্তার, পেশেন্টসহ অনেকেই পজিটিভ, সাস্পেক্টেড। সেই একই জায়গায় প্রোপার ডিসইনফেকশন ছাড়াই আমরা ডিউটি করে গেছি। এখনও প্রতিটা দিন করোনা সাস্পেক্টেড পেশেন্ট আসছেই৷’
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে শুরু থেকেই সেবার সাথে জড়িত রয়েছেন এমন একজন নার্স গণমাধ্যমকে বলছেন, যে সুরক্ষা পোশাকটি খুব দরকারি সেই পিপিই তাদের পুরোটা দেয়া হচ্ছে না। শুধু গাউন দেয়া হচ্ছে এবং খুব দরকারি এন-৯৫ মাস্কও দেয়া হচ্ছে না। এই হাসপাতালটিতে প্রথম দেশের করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া শুরু হয় এবং এখনো পর্যন্ত সেখানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ওই নার্স বলেন, ‘আমরা একটা রোটেশন ঠিক করে নিয়েছি রোগীর ক্লোজ কন্টাক্টে কোনদিন কে যাবে। যেমন একদিন তিনজন পিপিই পরবেন এবং রোগীদের কাছে যাবেন। আর অন্যরা নার্সিং স্টেশনে ডিউটি করবেন। তারা আবার অন্যদিন পিপিই পরবেন।’ প্রশ্ন হলো চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থাই যদি হয় এই, তাহলে এসব হাসপাতালে গিয়ে সাধারণ মানুষ কী সেবা পাবে বা পাচ্ছে?
করোনাযুদ্ধের সবচেয়ে বড় সংকট চিকিৎসাখাতে অব্যবস্থাপনা। আর এই অব্যবস্থাপনার পেছনে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় নানা সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি দুর্বল চেইন অব কমান্ডও অনেকখানি দায়ী। চিকিৎসাপ্রশাসনে নন-চিকিৎসক আমলাদের আধিপত্য নিয়ে ডাক্তারদের ক্ষোভ বহুদিনের। যেটি এবার করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় নতুন করে প্রকাশিত হলো বলে মনে হয়।
ঢাকার বাইরে গিয়ে, বিশেষ করে জেলা-উপজেলা শহরের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কেন চিকিৎসকরা থাকতে চান না? কেন এসব জায়গায় বদলির পর থেকেই ঢাকায় অথবা নিদেনপক্ষে বিভাগীয় শহরে আসার জন্য তদবির করেন? মাঠপর্যায়ে দীর্ঘদিন রিপোর্টিং করার সুবাদে অসংখ্য চিকিৎসকের কাছে এই প্রশ্ন করেছি। যেসব জবাব পেয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ডাক্তারদের সম্পর্ক ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা। এই করোনার কালে এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কথা বলা প্রয়োজন।
Advertisement
২.
উন্নত চিকিৎসা বললেই আমরা প্রাইভেট কোনো অভিজাত হাসপাতাল বা সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডকে বুঝি। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা- খুব ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছোটেন (করোনা অবশ্য সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে)। স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীও চিকিৎসার জন্য বিদিশে যান। যে দেশের নীতিনির্ধারকরাই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর ভরসা করেন না, সে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হবে কেন? প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, নেতা বা অন্য কারও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা যদি না থাকে তাহলে দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় অর্ধশত বছরেও কেন এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হলো না?
সিটিজেন রাইটস মুভমেন্ট নামের একটি সংগঠন একবার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার এই প্রবণতা বন্ধের দাবি জানিয়ে একটি মানববন্ধন করেছিল, সেখানে বক্তারা বলেছিলেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে রাজনৈতিক নেতাদের বিদেশে চিকিৎসা করানোর কোনো অধিকার নেই। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী-এমপিরা বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নেন, এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার।
বিশিষ্ট চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, চিকিৎসাবাবদ দেশ থেকে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশ চলে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, দেশব্যাপী তিন শতাধিক এ রকম এজেন্ট রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার রোগী বিদেশে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ভারতেই যাচ্ছেন গড়ে প্রতি মাসে ১৫ হাজার রোগী।
তবে রোগীদের এই বিদেশমুখীনতার পেছনে যেসব কারণকে দায়ী করা হয়, তার মধ্যে একটি বড় কারণ হলো দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগনির্ণয় ব্যবস্থার দুর্বলতা। অনেক সময় একই পরীক্ষার ফলাফল দেশে একরকম হয়, বিদেশে গিয়ে হয় ঠিক তার উল্টো। যে কারণে অনেক মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে ভরসা পায় না। অথচ এই ভরসা তৈরি করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
৩.
দেশের সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। ক্ষমতাবান লোক ছাড়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার; সিট বা কেবিন পাওয়া তো দূরের কথা। পক্ষান্তরে প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে পয়সা থাকলেই সিট, কেবিন ও চিকিৎসার গ্যারান্টি আছে। কিন্তু রোগীর সুস্থ হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। বরং বাড়তি টাকা নেয়ার জন্য মৃত্যুর পরও মরদেহ আইসিইউতে রাখার ঘটনাও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। আবার প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার ও সেবকদের অনেকেই আসেন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে। সেসব জায়গায় আসলেই কী পড়ানো হয়, পাস করে বেরিয়ে আসলেই কতজন ভালো ডাক্তার হন, তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে।
অভিজাত হাসপাতালে গেলেই বিনা প্রয়োজনে ডাক্তাররা একগাদা পরীক্ষা ধরিয়ে দেন, রোগীকে টেনেটুনে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান এমনকি মৃত্যুর পর আইসিডিউতে মরদেহ বন্দি করে বিল বাড়ানো হয়- এসবের পেছনে রয়েছে প্রধানত হাসপাতাল মালিকদের লোভ। মালিকরা চিন্তা করেন, তিনি ৫০ কোটি টাকা ব্যাংকে রাখলে মাসে কত টাকা মুনাফা পেতেন? সেই টাকা দিয়ে হাসপাতাল বানিয়েছেন। অতএব এখান থেকে যদি তার সেই পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি আয় না হয়, তাহলে হাসপাতাল বানিয়ে তার লাভ কী হলো? মালিকদের এই পয়সা আয় করে দেবেন কারা? অবশ্যই চিকিৎসকরা। তারা না চাইলেও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিতে বাধ্য হন। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো গেলে তারপর মোটা অংকের বিল করেন। কারণ কোন ডাক্তার মাসে কত টাকা আয় করে দিয়েছেন, তারওপর তার ওই হাসপাতালের ঝা চকচকে রুমে বসে রোগী দেখা এবং তার বিনিময়ে পয়সা আয় নির্ভর করে। এটা ডাক্তার ও হাসপাতাল মালিকদের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। একই ডাক্তার একই রোগীকে সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে দেখলে কোনো অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন না বা অপারেশনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন না। সুতরাং বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা যদি চিকিৎসাকে আর দশটা ব্যবসা হিসেবে না নিয়ে এটাকে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে নিতেন এবং ‘নো লস নো প্রফিট’ মডেলে হাসপাতালগুলো চালাতেন, তাহলে এই হাসপাতালগুলো ‘কসাইখানা; হিসেবে পরিচিতি পেত না।
৪.
তাহলে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার স্বাস্থ্য ঠিক করার জন্য কী করতে হবে?
১. জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করা; সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া; তাদের মানসম্মত আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২. স্থানীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে সেখানে খুব গুরুতর বা বিশেষ কোনো রোগ ছাড়া মানুষকে রাজধানী বা বিভাগীয় শহরের বড় হাসপাতালে যেতে না হয়।
৩. সরকারি হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রগুলো সচল রাখা; সেখানের অপারেশন থিয়েটার ও ল্যাবের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল নিশ্চিত করা; সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা।
৪. সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্ধারিত কর্মঘণ্টার মধ্যে যাতে মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেন এবং এর বাইরে অন্য সময়ে তিনি চাইলে যাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন, সেই সুযোগও রাখতে হবে। এ জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হবে। বিদ্যমান নীতিমালা জনবান্ধব করতে হবে।
৫. করোনার পরিস্থিতি যেহেতু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, স্বাস্থ্য বা চিকিৎসাব্যবস্থাই হবে আগামীর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, অতএব এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ানোই সমাধান নয় বরং বাজেটের অর্থ সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় পূর্ণ মাত্রায় খরচ হচ্ছে নাকি অধিকাংশই লুটপাট হচ্ছে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
৬. বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোয় সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে। চিকিৎসার নামে যারা কসাইখানা গড়ে তুলেছে, প্রয়োজনে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
৭. সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের ওপর ওষুধ কোম্পানির দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিজেদের জিহ্বাটাও একটু সংযত করতে হবে।
৮. কোন পদের চিকিৎসক সর্বোচ্চ কত টাকা ফি নিতে পারবেন তা নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং এর বেশি কেউ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯. বিনা প্রয়োজনে রোগীকে ডাক্তাররা যাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিতে বাধ্য না হন, সে জন্য বেসরকারি হাসপাতালের মালিকদের লোভ সংবরণ করতে হবে। যেসব মালিক চিকিৎসাকে জনসেবা মনে না করে মানুষের গলাকাটা ব্যবসা মনে করেন, তাদের হাসপাতালের বদলে অন্য কোনো ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
১০. চিকিৎসাখাতে আমলাতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে। চিকিৎসাপ্রশাসনে বিসিএস ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। একজন আমলা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেসব সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের জন্যও সেসব নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, রংধনু টেলিভিশন।
এইচআর/বিএ/পিআর