ডা. মোস্তফা কামাল
Advertisement
এভাবে দেশে লকডাউন কতদিন চলবে বা চলতে পারে? কারো কাছে কোনো উত্তর নেই। সারা গিলবার্ট যদি ভ্যাকসিনে সফলও হন; তা-ও আমাদের মতো দেশে আসতে প্রায় বছরখানেক সময় লেগে যেতে পারে। ততদিন কি এভাবে দেশ লকডাউন থাকতে পারে!
উন্নত দেশ পারলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এটা একদমই সম্ভবপর নয়। ভাইরাস থেকে বেঁচে গেলেও ক্ষুধার তাড়নায় আমাদের বেঁচে থাকা মুশকিল হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ লকডাউন তুলে দেওয়া হবে; ততই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
তাহলে কি এখনই লকডাউন তুলে দেওয়া উচিত? আমি বলি, না। তবে তুলতে হবে। তার আগে কিছু কাজ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। যে কাজগুলো লকডাউন শেষে অবশ্যই করতে হবে। যেমন-
Advertisement
১. জনসমাগমের জায়গাগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তাই-ক) প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড নির্দিষ্ট করতে হবে। প্রতিটি স্ট্যান্ডে লাল দাগ দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে বৃত্ত করে দিতে হবে (লোকাল বা দূরপাল্লার)। যেখানে মানুষ অপেক্ষা করবে। বাস এ স্থান ছাড়া কোথাও থামবে না।
খ) টিসিবির মাধ্যমে যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করা হয়; তা-ও এভাবে স্থান, বার, সময় ঠিক করে গোল বৃত্ত করে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করতে হবে।
গ) মসজিদ বা অন্যান্য প্রার্থনালয় বন্ধ রাখা যাবে না। সেখানেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে গোল বৃত্ত করে নামাজ পড়া বা প্রার্থনা করার সুযোগ দিতে হবে।
ঘ) অলরেডি বাজারগুলো খোলা মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। শপিং মলগুলোতেও একই ব্যবস্থা করতে হবে।
Advertisement
২. সামান্য সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসা বন্ধ করতে হবে। কারো জ্বর, কাশি বা ডায়রিয়া হলে শুরুতেই হাসপাতালে আসার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি থাকেন। তিনি এগুলোর ওষুধ দিতে পারেন বলে আমার মনে হয়। যদি তিনি না পারেন; তবে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইমো, স্কাইপি, জুম-এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা হাসপাতালের চিকিৎসকের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করে সাহায্য নিতে পারেন।
৩. স্কুল-কলেজে একইভাবে দূরত্ব মেনটেইন করে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক শ্রেণিতে ডিজিটাল প্রজেক্টর থাকতে হবে।
৪. ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং চালু করতে হবে। যেমন- কেউ টাকা তুলতে ব্যাংকে যাবেন না। বিকাশ, রকেট এসব অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা উঠানো, কেনা-বেচাসহ সব কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। মানুষ ব্যাংকে যাবে শুধু টাকা জমা দিতে। তা-ও অনেক ব্যাংক বুথ করেছে; যেখানে টাকা জমা দেওয়া যায়।
৫. সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করতে দেশে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো আলোচনা-সমালোচনা করার সুযোগ থাকবে না। তাদের স্বাধীনভাবে পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করতে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হবে।
৭. গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো এক্সপার্ট চিকিৎসকদের সাথে বসে স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করে চালাতে হবে।
এভাবে প্রস্তুতি নিলে আশা করা যায়, দেশ থেকে লকডাউন তুলে নিলেও আমরা করোনা মহামারীতে নিমজ্জিত থাকবো না। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এ মতামত তুলে ধরলাম। আশা করি বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), মেডিকেল অফিসার (ওপিডি), শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।
এসইউ/এমএস