সম্পত্তির হিসাব না দেয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে সাভারের রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
Advertisement
রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালের ২২ মে মালিক সোহেল রানা, তার স্ত্রী এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দায়-দেনা ও আয়ের যাবতীয় সম্পদের বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক। এর আগে থেকেই রানা কাশিমপুর কারাগারে থাকায় তার নামে নোটিশ জারি করা যায়নি। পরে কারাগারেই নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
এ সংক্রান্ত আইনি জটিলতার নিরসন করে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল সোহেল রানার নামীয় ইস্যুকৃত সম্পদ বিবরণীর নোটিশ বিশেষ বাহকের মাধ্যমে কাশিমপুর কারাগারে পাঠায় দুদক। এরপর ২ এপ্রিল নোটিশটি সোহেল রানার কাছে পাঠান জেল সুপার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করে প্রথমে স্ত্রীর মাধ্যমে সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন রানা।
এ আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে দুদক জানিয়ে দিলে রানা পরে আর নোটিশের কোনো জবাব কিংবা সম্পদের হিসাব বিবরণী দুদকে দাখিল করেননি। ওই বছরের ২৬ এপ্রিল সম্পদের হিসাব বিবরণী ফরমে কোনো তথ্য না দিয়ে তা খালি পাঠান তিনি।
Advertisement
সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করায় ওই বছরের ২০ মে দুদকের উপপরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম সাভার থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার পর বিচারিক (নিম্ন) আদালতে বিচার শেষে ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট নির্ধারিত সময়ে সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় ঢাকা বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েসের আদালত দুদকের এ মামলায় তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন।
হাইকোর্টে আপিল করলে তা ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর শুনানির জন্য গ্রহণ করে জরিমানা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
তখন আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সোহেল রানার পক্ষে ছিলেন- জাহানারা বেগম।
Advertisement
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিচারাধীন রয়েছে। এখনও শুনানি হয়নি। তিনি (রানা) জেলেই আছেন।
২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। রানা প্লাজা ধসের পর পরই সোহেল রানার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে এ অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের উপ-পরিচালক মফিদুল ইসলাম ও উপপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম।
তাদের দেয়া অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাত্র ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যেই সাভারে দু’টি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেন রানা। এর একটি ৫০ শতাংশ জমিতে নির্মিত নয়তলা রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হন। আরেকটি আটতলা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা টাওয়ার (প্রতি ফ্লোর ৪০০০ বর্গফুট)। সাভারে সোহেল রানার পাঁচতলা আবাসিক ভবন এবং মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার জয়মণ্ডপের গ্রামের বাড়িতে একটি দোতলা ভবনও রয়েছে।
এছাড়া রানা ব্রিকস এবং এম এ কে ব্রিকস নামের দু’টি ব্রিক ফিল্ডও রয়েছে। সাভার পৌর এলাকা ও পৌর এলাকার বাইরে রানা এবং তার মা-বাবার নামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। সাভার বাসস্ট্যান্ডে রানার নামে রানা অয়েল মিল রয়েছে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকে পাঁচটি ঋণ হিসাবসহ ২৩টি ব্যাংক হিসাব আছে। এর মধ্যে রানার নামে ৩৫ লাখ টাকার একটি এফডিআরও রয়েছে।
এ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল প্রায় ১৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক ও তার মা মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধেও পৃথক দু’টি দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক।
এফএইচ/এফআর/এমএস