জাতীয়

চেনা ট্রেন কবে নেবে আবার অচেনা পথে!

দেশের জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী যাতায়াত মাধ্যম ট্রেন বন্ধের একমাস পূর্ণ হল শুক্রবার (২৪ এপ্রিল)। স্বাধীনতার পর এমন দীর্ঘ সময় কখনও ট্রেন বন্ধ থাকেনি। এমনকি কখনও এইভাবে বন্ধ হবে তা কল্পনাও করেননি কেউ। স্বাধীনতার পর কেন বৃটিশ আমল থেকে এ ধরনের বিপর্যয় কখনও দেখেনি দেশবাসী। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক রুটের রেল বন্ধ থাকলেও দেশজুড়ে টানা রেল বন্ধের ঘটনা এটিই প্রথম। ফলে রেলের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি যাত্রীরাও পড়েছেন অথৈ সাগরে।

Advertisement

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একমাস ধরে ট্রেন বন্ধ থাকলেও আবার কবে চালু হবে তার সমাধান কারো কাছে নেই। এই অনিশ্চিয়তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে যেমন হতাশা রয়েছে, তেমনি মন ভালো নেই রেলে কর্মরতদেরও। এমন কী সাবেক কর্মকর্তারাও এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ রেলপথ সরকারি মালিকানায় পরিচালিত দেশের একটি মুখ্য পরিবহন সংস্থা। দেশের এক প্রান্তকে অন্য প্রান্তের সঙ্গে সংযোজনের জন্য রেলপথ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা। তাই রেলের সার্বিক উন্নতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এ বিষয়ে সাবেক রেলমন্ত্রী মজিবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর ট্রেনের অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে, সংস্কার হয়েছে। কিন্তু কোনো কালেই এত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে কত যুদ্ধই তো দেখেছে এসব রেল লাইন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়েকে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’ নামকরণের পর অনেক আন্দোলনের ঝড় বয়ে গেছে রেলের উপরে। কেউ কেউ আন্দোলরে নামে উপড়ে দিয়েছে লাইন। কেউবা আবার রেল পুড়িয়ে কয়লা করেছে। তবুও যাত্রী ও পণ্য নিয়ে ছুটে চলেছে রেল।’

Advertisement

রাজধানীর প্রধান দুই রেলওয়ে স্টেশন কমলাপুর ও বিমানবন্দরসহ সারাদেশে স্টেশনগুলোতে এখন পিনপতন নীরবতা। সেখানে নেই যাত্রীদের কোলাহল। নেই কুলি ও হকারদের হাকডাক। স্টেশনমুখী যানগুলো বন্ধ থাকায় রাস্তাও শূন্য। শত শত গ্রাম, মাঠ, খাল-বিল, নদী পেরিয়ে ট্রেনগুলো চলার পথ এখন শূন্যতায় ভরা। লাইনগুলো যেন আলস্যে মোড়া জবুথবু কোনো বুড়ি। তাই রেললাইনের আশপাশের অধিবাসীদের মনও ভালো নেই। তারা চান ঝমঝম শব্দ তুলে আবার ট্রেন চলা শুরু হোক।

জামালপুর জেলা সদরের নান্দিনার রেল লাইনের ঘা ঘেষে ইব্রাহিম হোসেনের বাড়ি। তিনি রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রেলে কাজ করেছি। ট্রেন এভাবে টানা কোনো দিন বন্ধ হয়নি। করোনা ভাইরাসের কারণে ট্রেন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। তাতে আমরা সবাই দুঃখিত। আল্লা যদি রহমত করে তাহলে রেল আবার চালু হবে। মানুষ সুযোগ সুবিধা পাবে। কাজ কর্ম করতে পারবে। আমার বাড়ির পাশেই রেললাইন। অনেক দিন ধরে রেলের ঝনঝনি শব্দ পাই না। এটা আমার একটা দুঃখ।’

এ বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, 'এখনো রেল চালুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সীমিত আকারে চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু কবে থেকে কোন রুটে রেল চলবে সেটা এখনোও চূড়ান্ত হয়নি। সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে।’

এক মাস বন্ধ থাকায় রেলের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'সেভাবে টাকার অংকে ক্ষতি নির্ধারণ সম্ভব নয়। তবে আর্নিংয়ে যেমন প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রেলের সব ধরনের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। এতেও প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।’

Advertisement

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দেশের সব রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। গত ২৪ মার্চ দুপুরে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এ ঘোষণা দেন। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রী জানান, যেসব রেল বিভিন্ন বেজ স্টেশন থেকে ঢাকায় এসেছে, সেগুলো আবার ফিরে যাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। তবে তেল, খাদ্যসহ জরুরি পণ্য পরিবহনে সীমিত আকারে ট্রেন চলবে।

এইচএস/এএইচ/এমএস