দেশজুড়ে

যেভাবে করোনা মুক্ত হলেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহেই সুস্থ হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসাসেবা নেন এবং সাতদিনেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। সুস্থ হওয়ার পর দুই বার নমুনা পরীক্ষা করেও তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এতে তিনি করোনা মুক্ত বলে নিশ্চিত হয়েছেন।

Advertisement

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আমি প্রতিদিন নিয়মিত ৪/৫ বার গরম পানির গারগিল করতাম। গরম পানিতে ভিনেগার ও লবণ ব্যবহার করেছি। নিয়ম করে প্রতিদিন একাধিকবার গরম পানির ভাপও নিতাম। প্রতিদিন গোসল করেছি এবং নিজের জামা-কাপড় নিজেই ধুয়েছি। আমার বিছানার চাদর ও বাথরুম আমি প্রতিদিন কিংবা কখনও একদিন পরই পরিষ্কার করেছি। আমি একাকি থেকেছি। একেবারেই সবার থেকে আলাদা থেকেছি। প্রতিদিন আমার টেবিলে খাবার রেখে চলে গেলে আমি খেয়ে সেটি নিজে পরিষ্কার করেছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকে আল্লাহকে স্মরণ করেছি তবে তেমন কোনো ওষুধই আমি সেবন করিনি। কারণ এ করোনার কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। যার কারণে ওষুধ সেবন করিনি।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আইসোলেটে থেকে প্রতিদিন সকালে একবার এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে আধা চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে গারগিল করেছি। বিকেলে আরেকবার করেছি। একইভাবে সকালে একবার এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে গারগিল করেছি, রাতেও করেছি। দিনে-রাতে একাধিকবার গরম পানির ভাপ নিয়েছি। ভিনেগার একটি অ্যাসিড, এতে জীবাণুর মৃত্যু ঘটে। একইভাবে গরম পানিতে লবণও কার্যকরী। এভাবেই আমি সুস্থ হয়েছি। এর বাইরে আমি আর কিছুই করিনি। তবে এ সময়টাতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার ও ফল খেয়েছি। শাকসবজিও প্রচুর পরিমাণে খেয়েছি। নিয়মিত লেবু, মালটা, আপেল, কমলা খেয়েছি।

ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, আমি শুরু থেকেই সুস্থ অনুভব করছিলাম। আমার জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি কিংবা অন্য কোনো উপসর্গ ছিল না। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (যিনি করোনা প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধি) আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের সংস্পর্শে থাকায় আমার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে আমার শরীরে। তখন আমি নিজে বাড়িতে আইসোলেশনে চলে আসি। তারপর সাতদিনের চিকিৎসাসেবা নিজেই নেই।

Advertisement

তিনি বলেন, গত ৯ এপ্রিল আমার নমুনা সংগ্রহের ফলাফল পজিটিভ আসে। সেদিন থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিন আমি নিজেই বাড়িতে চিকিৎসাসেবা নেই। পরে ১৬ এপ্রিল আবারও প্রথম টেস্ট ও ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় টেস্ট করানো হলে সেখানে পরপর দুইবার আমার করোনার ফলাফল নেগেটিভ আসে। এতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে নিশ্চিত হই আমি করোনামুক্ত। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করছি। আর নারায়ণগঞ্জবাসীকে অনুরোধ করছি সবাই যেন ঘরমুখী হন এবং বিনা কারণে কেউ যেন ঘর থেকে বের না হন।

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, এখন তিনি বিশ্রামে রয়েছেন। আগামী সপ্তাহে আবারও তিনি নিজের কাজ শুরু করবেন। তবে এখন মোবাইলে তার দাফতরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান।

শাহাদাত হোসেন/আরএআর/এমএস

Advertisement