করোনার প্রাদুর্ভাবে একদিকে দেশের বিমানবন্দরে লকডাউন অপরদিকে ভারতেও লকডাউন ৩ মে পর্যন্ত। এমন সময়টাতে দীর্ঘদিন আটকা পড়েছিলেন ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা। থাকা-খাওয়ার কষ্টের পাশাপাশি শেষ হয়ে যাচ্ছিল হাত খরচের টাকা। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের চোখেমুখে দেশে ফেরার আকুতি থাকলেও ফেসবুকে পোস্ট ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিলেন না তারা।
Advertisement
অবশেষে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। পাঁচটি ফ্লাইটে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় ইউএস-বাংলা। ইতিমধ্যে তিনটি ফ্লাইটের প্রতিটিতে ১৬৪ জন করে দেশে ফিরিয়েছেন তারা। দেশে ফিরে যাত্রীরা ইউএস-বাংলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
রেজাউন নাহার নামে চেন্নাইয়ে যাওয়া এক রোগীর মেয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ২৪ জানুয়ারি চেন্নাইয়ের ভেলোরে সিএমসি হাসপাতালে যাই। প্রায় দেড়মাস পর চিকিৎসা শেষে আমরা যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই তখন ভারতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। হটাৎ করেই ভারতজুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়। তারপর শুরু হয় দেশে ফেরার অপেক্ষা। প্রায় কয়েকশ বাংলাদেশি আটকে পড়ি। সবাই যে যার মত চেষ্টা করেও দেশে ফিরতে পারিনি।
তিনি বলেন, অবশেষে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা প্রথমদিনেই টিকেট কেটে ফেলি। প্রথমে যখন জানতে পারলাম বিশেষ ফ্লাইট আসছে, দেশে ফিরতে পারবো, তখন সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ভিনদেশে আটকে ছিলাম, দেশে ফিরতে পেরে আমরা সত্যি খুব কৃতজ্ঞ, ধন্যবাদ ইউএস-বাংলাকে।’
Advertisement
আব্দুর রহমান নামে চেন্নাই ফেরত এক বাংলাদেশি জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসা শেষে ২৭ দিন ভেলরে ছিলাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। ভেলরে তেমন কোনো ঘোরাফেরার জায়গা ছিল না, তাছাড়া আমরাতো হোটেল থেকে বের হতে পারতাম না। এই সময়টা অত্যন্ত বিরক্তিকর ছিল। ধন্যবাদ ইউএস-বাংলাকে এমন উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ফিরিয়ে আনার জন্য।
শামসুদ্দিন হারুন নামে এক রোগীর ছেলে জাগো নিউজকে বলেন, অতিরিক্ত ২৩ দিন আটকে পড়ার পর আমরা যখন ফ্লাইট পেলাম তখন ভেলোরের হোটেল থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার সময় রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় কি না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। তবে ফ্লাইটের তিন দিন আগে ১৯ এপ্রিল আমরা ইউএস-বাংলার একটি ইমেইল পাই। সেখানে আমাদের একটি ফরম দেয়া হয়, সেই ফরমটি পূরণ করে নিকটস্থ থানা থেকে যাত্রার অনুমতি নিয়ে খুব সহজে এয়ারপোর্টে পৌঁছি।
এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গত একমাসের অধিক সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসার জন্য আটকে পড়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি। গত ১৭ মার্চ থেকে আকাশ পথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় কোনোভাবেই বাংলাদেশি যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাস আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। বিশেষ ফ্লাইটে তাদের দেশে আনতে সহযোগিতার হাত বাড়ায় ইউএস-বাংলা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই সরাসরি চেন্নাইয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে তিনটি বিশেষ ফ্লাইটে ৪৯২ জনকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ইউএস-বাংলার ক্রু-পাইলটরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ফিরিয়ে আনার ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করছেন।
Advertisement
এর আগে গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার তিনটি ফ্লাওটে ১৬৪ জন করে মোট ৪৯২ বাংলাদেশিকে দেশে আনে ইউএস বাংলা। ২৪ ও ২৫ এপ্রিল দুই ফ্লাইটে আরও ৩২৮ জনকে ফিরিয়ে আনবে ইউএস-বাংলা।
করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২১-৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে বিমানবন্দরের যাত্রীবাহী সব বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়। এরপর আরও তিন দফায় এই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
জ্যামিতিক হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ায় গত ২৪ মার্চ থেকে ভারতে ২১ দিনের লকডাউনের ঘোষণা দেন নরেন্দ্র মোদী সরকার। ১৪ এপ্রিল রাতে লকডাউন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই মেয়াদ আরও ২১ দিন বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
এআর/এএইচ/এমএস