আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সরকারকে একই সঙ্গে দুটি বিষয়ে ভাবতে হয়। মানুষের জীবন যেমন রক্ষা করতে হবে, তেমনি মানুষের জীবিকাও রক্ষা করতে হবে। সুতরাং মানুষের জীবন এবং জীবিকা দুটো রক্ষাকল্পেই আমরা কাজ করছি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে। ইতিমধ্যে এক লাখ টন খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৬ লাখ টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আজকে এক মাস দেশের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ। বাংলাদেশে একটি মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। এটিই হচ্ছে সরকারের সফলতা।’
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ ও অন্যান্য বিষয়ের সমন্বয়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রশাসনের সঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন হাছান মাহমুদ। সভা সঞ্চালন করেন কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
Advertisement
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার গত কয়েক বছর ধরে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল বছরের সাত মাস বিতরণ করে আসছে। এ ধরনের আরও ৫০ লাখ কার্ড করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ এক কোটি কার্ডধারী মানে পাঁচ কোটি মানুষ। সমগ্র বাংলাদেশে সরকারিভাবে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে। এর বাইরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, পঙ্গু ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা এবং সরকারের ১৪৪টি কর্মসূচির মাধ্যমে আরও এক কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যে কারণে আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি আল্লাহর রহমতে এখনও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে। তাই বলে সরকার বসে নেই। ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতি হতে পারে, সেজন্য সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যে সব দেশে নাজুক পরিস্থিতি হয়েছে, সেরকম হলে আমাদের কী করতে হবে সেটি নিয়েও আমরা নানা প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই সমন্বয় সভা করা হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আজকের সমন্বয় সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি ঢাকা অঞ্চলের চেয়ে অনেক ভালো আছে। আমরা যাতে এই পরিস্থিতি রক্ষা করে যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে তাদের সুস্থ করে তুলতে পারি। সেজন্য কীভাবে করোনা রোগীদের আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া যায়, ভবিষ্যতে আরও রোগী বাড়লে কীভাবে তাদের চিকিৎসা দেয়া হবে এবং যারা ভালো আছেন তাদের কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া যায়, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘আজকে একটি মাস দেশের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ। বাংলাদেশে একটি মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। এটিই হচ্ছে সরকারের সফলতা। সরকারি সাহায্যের বাইরে আমাদের সংসদ সদস্য, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং অবস্থা-সম্পন্ন বিত্তশালীরা সহায়তা দিচ্ছেন। সুতরাং সমস্ত কিছু সমন্বয় করার জন্যই আজকের এই বৈঠক।’
Advertisement
ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য সরকার আলাদা ব্যবস্থা করেছে, এ ধরনের একটা সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন অনলাইনে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকারের এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই এবং ছিল না। এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজকে পরিষ্কার করেছেন। আমি জানি, দুয়েকটি অনলাইনে এই ধরনের সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এটিকে ভালোমতো যাচাই-বাছাই না করে যারা এই ধরনের সংবাদ পরিবেশন করেছেন তারা সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এই ধরনের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়া দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, দেশের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে আমরা সবাই নিজে নিজে দায়িত্বশীল আচরণ করব এবং সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আমরা যত্নশীল হব।’
নিম্ন আয়ের মানুষদের ত্রাণ দেয়া হলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিষয়ে কী ভাবা হচ্ছে- জবাবে পাশে উপস্থিত ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতের আঁধারে তাদের ঘরে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। হয়তো সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক বন্ধনটা অনেক বেশি। এই সময়ে বুঝা যাচ্ছে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। এটা এই সংকটের মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। আমরা সবাই ইউনাইটেড (একতাবদ্ধ) হয়েছি। মানুষকে কত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরত নেয়া যায় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন।’
সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন- আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী এমপি, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, আবু রেজা নদভী এমপি, ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ প্রমুখ।
এফআর/পিআর