ধর্ম

সতর্কতা অবলম্বন যে কারণে মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বে জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে। সব ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীর মানুষই ধর্মীয় ও রাষ্ট্র ঘোষিত সতর্কতার নীতি অবলম্বন করে চলছে। আল্লাহর ওপর ভরসার নামে অসচেতন হওয়াকে ইসলাম সমর্থন করে না। কেননা সতর্কতা অবলম্বন আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল পরিপন্থী নয়।

Advertisement

করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভারে সময়ে ধর্মের নামে কিংবা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসার নামে যারা নিজেদের ইচ্ছামতো জীবন যাপন করছেন, যাচ্ছেতাই চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন ইসলাম এটিকে সমর্থন করে না। বরং কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর এবং দলে দলে ভাগ হয়ে কিংবা মিলিতভাবে অগ্রসর হও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৭১)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অংখ্য হাদিসও এ প্রমাণ দেয় যে, সতর্কতা অবলম্বনই মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে মহামারি ও রোগ-ব্যধি থেকে বেঁচে থাকতেই হাদিসে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন। হাদিসের যে নির্দেশনাগুলো মেনে চলছে পুরো বিশ্ব। হাদিসে এসেছে-

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)

Advertisement

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কুষ্ঠ (মহামারি) রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক।’ (বুখারি)

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যারা সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত তাদের উচিত যারা সুস্থ তাদের থেকে দূরত্বে অবস্থান করা।’ (বুখারি ও মুসলিম)

এ ছাড়াও হাদিসের অনেক নির্দেশনা রয়েছে। যা মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গণমাধ্যম, দেশ ও বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলাররাও সতর্কতা অবলম্বনের সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলতে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন, দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

তাই তাওয়াক্কুলের নামে নিজের মন মতো চলাফেরা করার কোনো সুযোগ নেই। মহামারি করোনায় সতর্কতা অবলম্বন করে ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো মেনে সরকারকে সহায়তা করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

Advertisement

সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি তুলে ধরে ইসলামিক স্কলার মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি তার এক লেখায় একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। আর তাহলো-

প্রচণ্ড ঝড়ের সময় একটি স্থানে দাঁড়ানো এক পথিককে এক ব্যক্তি এ মর্মে সতর্ক করলো যে, ‘এ স্থান থেকে সড়ে দাঁড়ান। ঝড়ের সময় এখানেই বজ্রপাত হয়।'

পথচারি ব্যক্তি বলে উঠল- ‘আল্লাহ আমার রব তিনিই আমাকে বাঁচাবেন।'

কিছুক্ষণ পর আরেকজন ব্যক্তি এসে ওই পথচারি সতর্ক করল, ‘এ স্থান থেকে সড়ে দাঁড়ান। ঝড়ের সময় এখানেই বজ্রপাত হয়।'

সে এবারও একই উত্তর দিয়ে বলল- ‘আল্লাহর ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আল্লাহই আমাকে বাঁচাবেন।’

কিছুক্ষণ পর তৃতীয় আরেক ব্যক্তি এসে এভাবেই সতর্ক করে। এবার ওই পথচারি বলে ওঠে- ‘আল্লাহর ওপর তোমাদের তো ভরসা নেই। আমি আমার মাওলার ওপর পূর্ণ ভরসা রাখি। আমার মালিক আমাকে অবশ্যই রক্ষা করবেন।'

তৃতীয় ব্যক্তি চলে যাওয়ার পরপরই আকাশ থেকে এটি বজ্রপাত হয় এবং লোকটি মারা যায়। কিছু দূরে দাাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি পুরো দৃশ্য দেখছিল। সে ব্যক্তি তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন- ‘কিছুই বুঝতে পারলাম না। আল্লাহর ওপর এ ব্যক্তির এতা গভীর আস্থা ও বিশ্বাস থাকার পরও আল্লাহ তাআলা তাকে রক্ষা করলেন না!'

আল্লামা রুমি তার কাব্যে উল্লেখ করেন, ‘মূলত আল্লাহ তাকে বাঁচাতেই চেয়েছিলেন, যার ফলে আল্লাহ তাআলা পর পর তিন জন ব্যক্তিকে পাঠিয়ে তাকে সতর্ক করেছিলেন। সে সতর্কতা গ্রহণ না করে আল্লাহর ওপর ভরসা করেছিলেন। তাই সর্তকতা অবলম্বন না করে অজ্ঞতাবশতঃ তাওয়াককুল করেই মারা গেলো।'

এ কারণেই হাদিসে এসেছে, আগে তোমার উটের রশি দিয়ে বেঁধে রাখো, তারপর আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বা ভরসা করো। সতর্কতা বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে যে কোনো কাজে এমনিতে আল্লাহ ওপর তাওয়াককুল বা ভরসা করলে তা আল্লাহর জিম্মায় থাকে না।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত আগে সতর্কতা অবলম্বন করা। তারপর মহান আল্লাহর ওপর সতর্কতা অবলম্বন করা। এ সতর্কতা অবলম্বনই মুমিনের অন্যত বৈশিষ্ট্য। এ সতর্কতাই মুমিন মুসলমানকে মহামারি করোনাসহ দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-মুসিবত থেকে হেফাজত করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনাসহ দুনিয়ার যাবতীয়-বিপদ আপদ থেকে হেফাজত থাকার জন্য যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে তার ওপর ভরসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম