ধর্ম

রসিকতা ও খোসগল্পের আদব

বিনোদন, গল্প, চুটকি, কৌতুক, রসিকতা মানব জীবনের আনন্দের অংশ। কমবেশি প্রত্যেকেই রসগল্প করে থাকেন। তাই রসগল্পে শুধুমাত্র আত্মীয়-স্বজনের জন্য নয়, তা হতে পারে সবার সঙ্গে। তবে আত্মীয়দের মধ্যেই রসগল্প বেশি হয়ে থাকে। ইসলামেও রসগল্প, কথ্যবিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে তা হতে হবে সীমার মধ্যে। এমন গল্প বা রসিকতা করা যাবে না, যাতে গুনাহ বা বিশৃঙ্খলার নূন্যতম সম্ভাবনা রয়েছে। রসিকতার ধরণ জাগো নিউজে তা তুলে ধরা হলো-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রসিকতাহজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটা বাহনজন্তু চাইল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, আমরা তোমাকে একটা উটনীর বাচ্চা দেব। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আরে উটেরা সব উটনীদেরই বাচ্চা নয় কি? (আবু দাউদ, তিরমিজি)রসিকতায় সীমা লংঘন নিষেধরসিকতা একটা মোক্ষম দাওয়াই। আপনজন রেগে গেলে প্রথমত আমরা রসিকতা দ্বারাই তা থামানোর চেষ্টা করি। হাস্য-রহস্য দ্বারা সমস্যা-সমাধানের কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের সকলেরই আছে। ব্যবহার দোষে অতি প্রিয় জিনিসও ভীষণ অপ্রীতিকর হয়ে যায়। তাই খোসগল্পে, রসিকতায় আমরা সীমা লংঘন করব না।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসিকতায় সীমা লংঘন না করার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা করো না এবং তার সঙ্গে পরিহাস করো না’। এ নিষেধাজ্ঞা এজন্যই করেছেন যে, সাধারণত আমাদের রসিকতা হয় লাগামহীন। হয় তাতে মিথ্যা কথা বলি, নয়ত কাউকে আহত করি। এসবই কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ।কষ্টদায়ক রসিকতাঅনেকে শরীরে আঘাত করে রসিকতা করেন। এ রসিকতায় সবার সাবধান থাকা উচিত। যেমন- কেউ মাথায় জোরসে হাত দ্বারা আঘাত করে, নয়ত চুল ধরে টান দেয়, অথবা চামড়া আঙ্গুল দিয়ে দলন করে বা চিমটি কাটে। যার সঙ্গে এ আচরণ করা হলো, তার কষ্টের বিষয়টা কি আমরা ভেবে দেখেছি। বিশেষত শিশুদের সঙ্গে এ জাতীয় রসিকতা নির্মম নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছু নয়। মনে রাখতে হবে এটা রসিকতা নয়। রসিকতার নামে জুলুম।বিরক্তিকর রসিকতাকিছু মানুষ আছে যারা কোনো নির্দিষ্ট কোনো কথা বললে ক্ষেপে যান। একবার দু`বার বললে সাধারণত কোনো বিরক্তি আসে না। কিন্তু স্বভাবতই একাধিকবার বললে ক্ষেপে যায়। এ রকম রসিকতা একেবারেই নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছু নয়। উত্যক্ত করাই যাদের উদ্দেশ্য সেদিকে তাদের খেয়াল করার কথা নয়। বিরক্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না মারমুখো হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের হুশ হয় না। এটাও রসিকতার চরম বাড়াবাড়ি। অহেতুক অন্যকে বিরক্ত করা কোনও সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। কাজেই তা পরিত্যাজ্য।রসিকতায় আদবছোট-বড় সবার মধ্যেই রসিকতা হতে পারে। সেক্ষেত্রে, ছোটদের রসিকতা যেন বড়দের সঙ্গে আদবের গণ্ডি-অতিক্রম না করে। আর বড়দের রসিকতায় যেন ছোটদের প্রতি আদর-স্নেহের আবহ থাকে। উদাহরণ স্বরূপ জনৈক সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করা যায়। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি তাঁবুর ভেতর অবস্থান করছিলেন। সেই সাহাবি এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন, কিন্তু তাঁবুটি ছিল বেশ ছোট। সাহাবি রসিকতা করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পুরো শরীরটাই প্রবেশ করাব, না আংশিক? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পুরোটাই। (আবু দাউদ)পরিশেষে...খোসগল্পে, রস আড্ডায় রসিকতাকে সব রকম ক্ষতি থেকে রক্ষা করে শিক্ষণীয় করে তোলার জন্য কর্তব্য স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রেখে ভাষা, পরিমাণ বিষয়বস্তু ধরণ-ধারণ ইত্যাদিতে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেওয়া। এ ব্যাপারে হজরত সাঈদ ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি নিজ পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, বাছা! রসিকতায় পরিমিতিবোধের পরিচয় দিবে। এতে বাড়াবাড়ি ভাবমূর্তি নষ্ট করে ও মূর্খদের অন্তরে ধৃষ্টতার জন্ম দেয়। আবার এর অভাবে প্রিয়জনেরা তোমার থেকে দূরে সরে যাবে এবং সংগী-সাথীরা তোমাকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করবে। এমন যেন না হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে খোসগল্প, রসিকতায় মিথ্যা ও অনৈসলামিক বিষয়াদি পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : jagoislam247@gmail.comজাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।এমএমএস/আরআইপি

Advertisement