‘চাল-ডাল যা ছিল সবই ফুরাই গেল। মাঝে পাঁচ কিলো করে চাল দিয়াছিল বটে, খাইয়া-দাইয়া তাও শেষ হয়ে গেল বাবা! ছয়জনের সংসারে এক কেজি চাল আছে। এক কেজি চাল সিদ্ধ করলে ছয়জনের কি হবে? তাই কেজিরও বেশি কচু সিদ্ধ করে ভাতের চেয়ে বেশি পরিমাণে কচু খেয়ে থাকতে হচ্ছে। ’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠি শহরের বেদেপল্লীর বাসিন্দা স্বপ্না।
Advertisement
বেদে সম্প্রদায়ের বস্তিতে এখন খাবারের সংকট। করোনাভাইরাস কি তা এখানকার অধিকাংশ মানুষই জানেন না। ভাইরাসকে তারা ভানোস নামেই তাদের কাছে পরিচিত করে নিয়েছেন। আর বুঝেছেন এই ভানোসের জন্য তাদের রুটি-রুজি এখন বন্ধ।
ঝালকাঠি শহরের ১ নং ওয়ার্ড কলেজমোড় ও বাসন্ডা ব্রিজের মধ্যবর্তী একটি পরিত্যক্ত স্থানে প্রায় সাত বছর ধরে বেদে সম্প্রদায়ের ১৪টি পরিবারের বসবাস। ১৪টি পরিবারে লোকসংখ্যা রয়েছে শতাধিক। খুপড়ি ঘরেই তাদের সবার বসবাস। এদের অধিকাংশের ঘরেই এখন খাবার বলতে কচু সিদ্ধ এবং সঙ্গে লবণ।
এখানকার আরেক বাসিন্দা রোজিনা আক্তার বলেন, রাস্তা-ঘাট ও গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে আমাদের উপার্জন করতে হয়। এখন আমরা বাইরে বের হতে না পারায় উপার্জনও বন্ধ রয়েছে। পাশের একটি ডোবায় অনেক কচু গাছ রয়েছে আমরা সেখান থেকে কচু নিয়ে লবণ-মরিচ দিয়ে সিদ্ধ করে অল্প কয়টা ভাতের সঙ্গে বেশি করে খাচ্ছি।
Advertisement
বেদে সরদার আনোয়ার হোসেন বলেন, ২৫ মার্চ থেকে আমরা কেউ বাইরে যেতে পারি না। এমনকি রাস্তায়ও উঠি না। ১৭ এপ্রিল থেকে লকডাউন করা হয়েছে। লকডাউনের আগে স্থানীয় কাউন্সিলর রেজাউল করীম জাকির ও জেলা প্রশাসন থেকে কিছু চাল-ডাল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিবার প্রতি পাঁচ কিলো করে পাওয়া সেই চাল ফুরিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে কচু সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে খাওয়া চলছে। ১৪টি পরিবারে গড়ে অন্তত সাতজন করে সদস্য রয়েছে। এদের সকলেরই খাবার এখন কচু সিদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন এবং করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভিক্ষে করতেও নামতে পারছি না। যেটুকু চাল মিলছে তা রেঁধে বাচ্চাদের দেয়া হচ্ছে। শুধু ভাত আর সঙ্গে কচু সিদ্ধ- এই খাবার-ই পরমানন্দে মুখে তুলে নিচ্ছে কচি-কাচাদের দল। যারা একটু বড় তারা বাবা-মা-কাকা-জেঠিমা-দিদামাদের মতোই কচু সিদ্ধ খেয়েই পেট ভরাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি সরকার ও বিত্তবানদের প্রতি বিলাসিতা নয়, জীবন ধারণের জন্য মানবিক সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।
আতিকুর রহমান/আরএআর/এমকেএইচ
Advertisement