করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে সরকারি পদক্ষেপের ফলে রাজধানী ঢাকার রাজপথে লোকজন ও যানবাহন তেমন না থাকলেও অলি-গলির চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। সেখানে মানা হচ্ছে না ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায়ের কোনো পরামর্শ-নির্দেশনা। কিশোর ও উঠতি বয়সী তরুণরা আড্ডা দিচ্ছে যত্রতত্র। কোথাও কোথাও আবার যানবাহনের চাপ তো আছেই, জ্যামও পড়ছে। এর সঙ্গে রিকশা ও অটোরিকশা চলছে দেদার।
Advertisement
আজ বুধবার (২২ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর আশকোনা, খিলগাঁও, উত্তর বাড্ডা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ঘুরে এমন আড্ডা, জটলা ও জ্যামের চিত্র দেখা যায়।
আশকোনার কাঁচাবাজার রোড ও খিলক্ষেত রেলগেটের সামনে দেখা যায়, অনেক উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণ আড্ডা দিচ্ছেন। উত্তর বাড্ডার কাঁচাবাজার এলাকায় ঢোকার সময় দেখা যায় দীর্ঘ যানজট, যা ছিল দুপুর পর্যন্ত। প্রগতি সরণি থেকে ওই রাস্তায় ঢোকার সময় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। অবশ্য দুপুরের পর সেখানকার রাস্তা ফাঁকা হতে থাকে। উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার থেকে সাতারকুল রোডে সকাল থেকে অবাধে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও প্যাডেলচালিত রিকশা চলতে দেখা গেছে।
রামপুরা এলাকার উলন রোডেও কাঁচাবাজারে ব্যাপক লোক সমাগম দেখা যায়। সেখানেও সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই দেখা যায়নি কারও মধ্যে।
Advertisement
সেখানকার মুদি দোকানদার আবদুল মজিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষকে বলেও দূরে রাখা যায় না। অনেকে আবার উল্টো প্রশ্ন করেন, আল্লাহ মাইরি ফেলাইলে আপনি কি বাধা দিতে পারবেন?’
মেরুল বাড্ডার আনন্দনগর এলাকায়ও কিছু তরুণকে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায়। জটলা বেঁধে খোশগল্প করতে দেখা যায় রিকশাচালকদেরও। সেখানকার রিকশাচালক মো. তইবর বলেন, ‘চা খাওয়ার জন্য বাইরে আসছি। গ্যারেজেই থাকি। সেখানে আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়?’
ঢাকার অন্যান্য এলাকায়ও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব, পুলিশের টহলের কারণে রাজপথ অনেকটা ফাঁকা থাকলেও অলিতে-গলিতে চলছে আড্ডা, খোশগল্প।
করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার জনসাধারণকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিলেও তা কানেও তুলছেন না অনেকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দেশে হু হু করে বাড়লেও, বিশেষ করে উঠতি বয়সীরা এ দুঃসময়কে বিবেচনায়ও নিচ্ছেন না।
Advertisement
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ ছুটিসহ যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেগুলো কতখানি কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সবশেষ হেলথ বুলেটিন অনুসারে, দেশে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৭৭২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯০ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১২০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই মারা গেছেন ১০ জন।
করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি বলে বিশ্বজুড়ে লাশের সারি পড়ে গেছে। পৌনে দুই লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এ ভাইরাস থেকে নিজেকে ও পরিবারকে এবং সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে সবাইকে ঘরে থাকতে, অন্তত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞরা।
এইচএস/এইচএ/পিআর