বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত পুরো বিশ্ব। মহামারির কারণে ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বন্ধ ওমরা। লকডাউন ও কারফিউ বিরাজ করছে এ নগরীতে। মিসফালার এ চত্বরটি সমতল হওয়ায় সব সময় লোকে লোকারণ্য থাকে এ অঞ্চল। মক্কা নগরীর মসজিদে হারামের সন্নিকটে ব্যস্ততম সমতল এ স্থানটি ‘কবুতর চত্বর’ নামে পরিচিত। অসংখ্য কবুতরের মিলনস্থল এটি। মহামারি করোনার কারণে মানবশূন্য এ চত্বরের কবুতরগুলোর খবর কেউ রাখে কি?
Advertisement
পবিত্র নগরী মক্কার ইবরাহিম খলিল সড়কের গোল চত্বর থেকে হিজরা রোডের শুরু পর্যন্ত কম-বেশি কোয়ার্টার কিলোমিটার বিশাল উন্মুক্ত জায়গাজুড়ে মিসফালাহর এ কবুতর চত্বর অবস্থিত। যেখানে ধুসর রঙের ডোরাকাটা পাখনার অসংখ্য কবুতর ঝাঁকে ঝাঁকে জমায়েত হয়, খেলা করে আবার আপন মনে খাবার খায়।
হাবশি নিগ্রো নারী-পুরুষরা ছোট ছোট প্যাকেট ভর্তি কবুতরের দানাদার খাবার নিয়ে খদ্দেরের অপেক্ষায় চত্বরের পাশেই অবস্থান করে। হজ, ওমরা ও দর্শনার্থীরা হাবশি নিগ্রোদের থেকে এসব খাবার কিনে ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতরের মাঝে ছিটিয়ে দেয়। এ খাবার খেতেই কবুতরের ঝাঁক প্রবল বাতাস তৈরি করে খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা করে।
মহামারি করোনায় সে দৃশ্য এখন বিরল। যেখানে এখন মানুষের অস্তিত্বই শূন্যের কোটায়। যাদের কল্পনায় রয়েছে মক্কার এ দৃশ্য, স্বভাবতই তাদের মনে প্রশ্ন জাগে- এখন কি কেউ এসব কবুতরকে খাবার দেয়? এসব কবুতর কি হাজিদের পথ চেয়ে বসে আছে? কেউ জানে না, কবে হবে চলমান এ পরিস্থিতির অবসান?
Advertisement
মহামারি করোনার এ সময়ে হারামাইনডটইনফোর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দুটি দৃশ্য। এ দৃশ্যে দেখা যায়, সৌদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (জাওয়াযাত/আর্মি) এক সৈনিক কবুতর চত্বরের ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতরকে খাবার দিচ্ছে। এসব কবুতরের কয়েকটি যেন পরম মমতায় তার হাত থেকেই খাবার খাচ্ছে।
এ চত্বরের কবুতরের ইতিহাস বহু পুরোনো। কবে কোথা থেকে এসেছে এ কবুতর, সে তথ্য কারোরই জানা নেই। পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদে হারামের সন্নিকটে যখন বিশাল অট্টালিকা ও বড় বড় সড়ক ছিল না, তখনো এ কবুতর ছিল। বড় বড় অট্টালিকা ও বড় বড় সড়কও কবুতরগুলোকে এ চত্বর থেকে তাড়াতে পারেনি। আজও বহাল তবিয়তে রয়েছে এ কবুতরগুলো।
এমনকি মহামারি করোনায় মানুষের জন্য লকডাউন ও কারফিউ জারি থাকলেও বহু যুগ ধরে পরিচিত ধূসর বর্ণের ডোরাকাটা ডানার কবুতরগুলো আপন মহিমায় নিজেদের স্থানেই অবস্থান করছে। দায়িত্বরত পথচারীদের দেখলেই খাবারের জন্য ছুটে যায়।
এ কবুতরের ঝাঁক বেশি উপরেও উড়ে না আবার বায়তুল্লাহ তথা কাবা শরিফের দিকেও যায় না। ঘুরে ফিরে এ চত্বরেই অবস্থান করে। এ কবুতরগুলোর জন্যই সারা বিশ্বে লাখো-কোটি মানুষের হৃদয়ে তৈরি হয় অন্যরকম ভালোবাসা। তাই তো এ চত্বরে মানবহীন কবুতরের ঝাঁক দেখে প্রশ্ন জাগে- এ চত্বরের কবুতরগুলোর খবর কেউ রাখে কি?
Advertisement
এমএমএস/পিআর