আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চ) আয়, মুনাফা, গ্রাহক, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও প্রতিকুল নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন।
Advertisement
বুধবার (২২ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ের আর্থিক বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রামীণফোন জানিয়েছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৭ শতাংশ বেশি।
প্রথম প্রান্তিক শেষে মোট গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৫৩ লাখ যার মধ্যে ৫৩.৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪ কোটি ৪ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। প্রথম প্রান্তিকে ইন্টারনেট থেকে রাজস্ব গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৪.৬ শতাংশ।
Advertisement
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, ‘২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে আমরা ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। মার্চ পর্যন্ত এনওসি অনুমোদনের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিনিষেধ থাকায় আমরা পরিকল্পিত বিনিয়োগ করতে পারিনি। অন্যদিকে, প্রথম প্রান্তিকের শুরু থেকে আমাদের নম্বর সংকট দেখা দিয়েছিল, যেটি মোট গ্রাহকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে চমৎকারভাবে বাজার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নেটওয়ার্কে আমাদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় প্রথম প্রান্তিকের শেষে ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ’।
ইয়াসির আজমান বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের পার্টনার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আমরা গ্রাহক সেবায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। একইসঙ্গে এই কঠিন সময়ে আমরা সামাজিকভাবে আমাদের অবদান নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আমরা আমাদের প্রযুক্তি দক্ষতা দিয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং একইসঙ্গে ডাটা অ্যানালাইসিসি ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিরূপণে ম্যাপিংয়ে সহায়তা করছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধাদের জন্য আমরা ৫০ হাজার মেডিকেল গ্রেড প্রফেশনাল পিপিই এবং পরীক্ষার জন্য ১০ হাজার পিসিআর টেস্টিং কিট বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি।’
Advertisement
প্রতিষ্ঠানটির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এনওসির অনুমোদন পাওয়া শুরু করেছি। আমরা আশা করি, সামনের দিনগুলো আমাদের গ্রাহক সেবার মান আরও উন্নত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
গ্রামীণফোন জানিয়েছে, ২৯.৬ শতাংশ মার্জিনসহ প্রথম প্রান্তিকে কর পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭ কোটি টাকা। এ সময়ে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৭ টাকা ৯২ পয়সা।
গ্রামীণফোনের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ইয়েন্স বেকার বলেন, ‘প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের প্রবৃদ্ধি কমেছে। আমাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও আমরা ইন্টারনেটে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব। আমাদের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকদের জন্য আরও বেশি মানসম্মত সুযোগ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে শক্তিশালী নেটওর্য়াক নির্মাণ ও বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে।’
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, প্রথম প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে নেটওর্য়াক আধুনিকায়নের পাশাপাশি ১৯৭টি নতুন ফোরজি সাইট করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গ্রামীণফোনের মোট নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৪২। ভ্যাট, ফোরজি লাইসেন্স ফি, স্পেকটার্ম অ্যাসাইনমেন্ট ফি, ডিউটি ও ফিস বাবদ প্রথম প্রান্তিকে সরকারি কোষাগারে ২৪৬০ কোটি টাকা প্রদান করেছে যা মোট আয়ের ৬৮ শতাংশ।
এমএএস/এফার/এমএস