কবি বলেছেন, ‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে আমদের ছোট গাঁয়/গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়।’ কবির সেই ছোট গ্রামই অম্বিকাপুর। পল্লীকবি জসীমউদদীনের জন্মস্থান। কবিতায় তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর গ্রাম ঘুরে দেখবার। কবি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর গ্রাম ও অসংখ্য স্মৃতি। ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরে আসতে পারেন কবির স্মৃতিধন্য অম্বিকাপুর থেকে। এতে আপনার ভ্রমণের তৃষ্ণা মিটবে। পাশাপাশি পল্লীকবি সম্পর্কেও জানতে পারবেন অনেক কিছু।অবস্থানগ্রামের নাম অম্বিকাপুর। ফরিদপুর শহর থেকে কবির বাড়ি মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে। অটোরিকশায় মাত্র আধা ঘণ্টার পথ। পদ্মাপারের ছায়াঢাকা-পাখিডাকা এ গ্রামেই ছোট্ট একটা বাড়ি কবির। এ বাড়িতেই কবি কাটিয়েছেন প্রায় ৩২ বছর। যা যা দেখতে পাবেনএখানে এলে দেখতে পাবেন অনেক কিছু। কবির জীবনের প্রায় সব স্মৃতি। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে ইচ্ছেমতো ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন সবকিছু।কবির বাড়ি ও কবর: এখানে কবির স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। বাড়ির প্রবেশমুখেই কবির কবর। উঁচু বেদীতে ডালিম গাছের সাথে নানান রকম ফুলগাছ লাগানো, মাঝখানে কবির কবর। বাড়ির দিকে এগোতেই কবির বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতায় চোখ আটকে যাবে। বাড়ির চারদিকে তিনটি টিনের ঘর মাঝে উঠান। উঠানের এক কোণে রান্নাঘর। অন্যদিকে ঢেঁকিঘরটি এখনো অক্ষত। বাড়ির পেছনে ছিল একটি পুকুর। এই পুকুরটিই ভরাট করে নির্মিত হচ্ছে স্মৃতি কমপ্লেক্স। বাড়ির পাশে বড় খোলা জায়গায় ‘জসীম মঞ্চ’। তার পাশেই মৃতপ্রায় কুমার নদ। কিছু দূর এগিয়ে ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’। জসীম জাদুঘর: জসীম জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। কবির ঘর, কবির মেজো ভাইয়ের ঘর, ছোট ভাইয়ের ঘর ইত্যাদি। জাদুঘরের ছোট কক্ষে অনেক কিছু রাখা আছে। জাদুঘরের কক্ষের সামনের দিকেই বড় বড় বর্ণে লিখে টাঙানো কবির লেখা নিমন্ত্রণ, প্রতিদান, আসমানীসহ আরও কয়েকটি কবিতা এবং বেশ কিছু জনপ্রিয় গান। পাশের একটি কক্ষে ২০০৪ সাল থেকে চালু হয় ‘নারী-নকশী কাঁথা কেন্দ্র’। কেবলই স্মৃতি: ঘরে ওঠার সিঁড়িতে ফুলের টব সাজানো। কক্ষগুলোর সামনে কবির বিখ্যাত কবিতার দুই/তিন লাইন করে লেখা। কক্ষের ভেতর শুধু বিখ্যাত কবিতাগুলো নয়, সংরক্ষিত আছে কবির ব্যবহৃত নানা আসবাব, বাসন, পোশাক। আলমারিতে রাখা কবির বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ, হাতে লেখা বই, চিঠি, স্মারক ডাকটিকিট। নানা রঙের অসংখ্য পুতুলের ব্যতিক্রমী সংগ্রহ। কবি একসময় গাছের ওপর ছোট ঘর বানিয়ে সেখানে বসে কবিতা লিখতেন। সে ঘরটি এখনো আছে।আলোকচিত্র: কবির বাড়িতে টাঙানো রয়েছে অনেক স্মৃতিময় আলোকচিত্র। কবি পরিবারের সদস্যদের বাইরেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, হেনরি মিলার, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, দীনেশচন্দ্র সেনের সঙ্গে কবির ছবি । অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে পল্লীকবির একাধিক ছবি। কবির জীবনের শেষ ছবিটিও রাখা আছে।গ্রন্থ সংগ্রহ: এখানে কবির লেখা প্রায় সব গ্রন্থই আছে। পুলক দের সম্পাদনায় ‘জসীমউদদীন স্মৃতিকথা সমগ্র’সহ কবিকে নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধও রাখা হয়েছে। ‘আমার কণ্ঠ’ শিরোনামে দুই পর্বে কবির স্বকণ্ঠে গানের সংকলনও রয়েছে। জসীম মেলা: প্রতিবছর জানুয়ারিতে কবির জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘জসীম মেলা’। মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন এসে মেলামঞ্চে নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন করে থাকে।কীভাবে যাবেনঢাকার গাবতলী থেকে আরিচা হয়ে ফরিদপুর যাওয়ার জন্য রয়েছে বাস সার্ভিস। ঢাকা থেকে আজমেরী, গোল্ডেন লাইন ও আনন্দ পরিবহনে ফরিদপুর যাওয়া যায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও বাসযোগে ফরিদপুর শহরে আসা যায়। ফরিদপুর শহরে পৌঁছে সেখান থেকে অটোরিকশায় মাত্র ৩০মিনিটে চলে যাওয়া যায় অম্বিকাপুর। আরিচা ঘাট থেকে রেলপথেও যাওয়ার ব্যবস্থা আছে।থাকা-খাওয়ারাতে অবস্থান করতে চাইলে থাকতে হবে ফরিদপুর শহরে। সরকারি রেস্ট হাউজ, সার্কিট হাউজসহ রয়েছে অনেক ভালো মানের হোটেল। জে.কে ইন্টারন্যাশনাল, র্যা ফেল ইন, লাক্সারি, পদ্মা ও জোনাকিসহ বেশকয়েকটি হোটেল রয়েছে। এখানে একরাতে সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২,২০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। হোটেলেই রয়েছে খাওয়ার ব্যবস্থা। অথবা আপনি ইচ্ছেমতো যেকোনো রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিতে পারেন।পিকনিক কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের পক্ষ থেকে দলবেঁধে গেলে সেখানে নিজেরাই রান্না-বান্না করে খেতে পারবেন। বলতে গেলে পিকনিক বা শিক্ষাসফরের জন্য মনোরম একটি স্থান পল্লীকবির বাড়ি।এসইউ/পিআর
Advertisement