জাতীয়

করোনা পাত্তা পায় না যেখানে

টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয়ে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। নিম্ন আয়ের কয়েকশ মানুষ ট্রাকের পেছনে চুল পরিমাণ ফাঁকা না রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁও ৬০ ফিট রোডের বন ও পরিবেশ অধিদফতরের পাশে কয়েকশ মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে উপচে পড়া ভিড় করে টিসিবির পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

টিসিবির পণ্য ক্রয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে লাইনে দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন জানান, সব দোকানপাট বন্ধ থাকায় টিসিবির গাড়ি থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে এসেছেন। ৬-৭ ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করলেও এখনো প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেননি। ফলে কার আগে কে কিনবে এ চেষ্টায় প্রায় ৩০০ মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

লাইনে দাঁড়ানো মোহাম্মদ আতর আলী বলেন, টিসিবির ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করায় গরিব মানুষ এখান থেকে পণ্য কিনতে ভিড় করেন। সকালে টিসিবির ট্রাক আসার কথা থাকলেও দুপুর ১২টায় এসেছে। ট্রাক পৌঁছানোর আগেই এখানে কয়েকশ মানুষের লাইনে তৈরি হয়। ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করে সিরিয়াল না পেয়ে অধৈর্য হয়ে এখন কার আগে কে নেবে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

Advertisement

লাইনে দাঁড়ানো নুসরাত জাহান নামে আরেকজন বলেন, সকাল ৯টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। ৭ ঘণ্টা পার হলেও এখনো ২০ জনের পেছনে দাঁড়ানো। ৭ ঘণ্টার ওপরে না খেয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও এখনো প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারিনি।

তিনি বলেন, সকালে নির্ধারিত সময়ে ট্রাকগুলো পৌঁছলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় না। বিক্রেতারা দেরি করে আসায় মানুষের উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়।

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে না পেরে রাগ আর ক্ষোভে টিসিবির ট্রাকের বিক্রেতাদের গালাগালি করে অনেককে খালি হাতে ফিরে যেতেও দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ডাল, চিনি, ছোলা, সোয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ন্যায্যমূল্যের এসব পণ্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে করে নির্ধারিত স্থানে বসে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে বিক্রি কার্যক্রম।

Advertisement

আগারগাঁও ৬০ ফিট রাস্তায় টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকটি নির্ধারিত সময় আসছে না। প্রতিদিন প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা দেরি করে বিক্রয় কেন্দ্রে পৌঁছানোয় নিম্ন আয়ের মানুষদের উপচে পড়া ভিড় সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না।

ডিলার মো. শাহ আলমের উপস্থিতিতে পণ্য বিক্রয় করার নিয়ম থাকলেও তিনি উপস্থিত হন না। তিনজন বিক্রেতাকে দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হয়।

ট্রাকে বসা রিয়াজ নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘গোডাউন থাইকা ট্রাক ভইরা মাল নিয়া আইতে দেরি হইয়া যায়। স্পটে পৌঁছাইতে ১১-১২টা বাইজা যায়। এ কারণে দেরি হয়।’

সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে পণ্য বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, পুলিশ যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে, পুলিশ চলে গেলে সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়ে কার আগে কে নেবে সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তারা চেষ্টা করেও কয়েকশ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে নিতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

ডিলার শাহ আলমের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এমএইচএম/এএইচ/এমএস