দেশজুড়ে

ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডাক্তাররা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। করোনার মরণ থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষসহ ডাক্তাররা। এমন পরিস্থিতিতে রাজবাড়ীতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা

Advertisement

গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবার ভরসাস্থল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। বর্তমান সরকারের নানাবিধ উন্নয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে । রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে রয়েছে একজন পুরুষ ও মহিলা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ প্রয়োজনীয় লোকবল। বর্তমানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রই করানো হয় নরমাল ডেলিভারি। প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা সেবা শেষে দেয়া হয় প্রেসক্রিপশন ও সরকারিভাবে সরবরাহকৃত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি রয়েছে জেনেও পেশাগত দায়িত্ব পালনে জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সব ধরনের রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়া রোগীদের নমুনাও সংগ্রহ করছেন তারা।

জানা গেছে, রাজবাড়ীতে জেলা সদর হাসপাতাল একটি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিবার ও পরিকল্পনা অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত ২২টি ও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত ২০টি। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত রয়েছে মোট ৭৮ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার।

Advertisement

জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আসা রোগীরা জানান, গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকলে বিনা চিকিৎসায় তারা নানা রোগে আক্রান্ত হতেন। এখানে আসলে ডাক্তাররা তাদের যত্ন সহকারে চিকিৎসা দেন। ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খেয়ে তারা ভালো হয়েছেন এবং আবারও দেখাতে এসেছেন। কোনো টাকা-পয়সা ছাড়া প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা সেবা তারা এখানে পাচ্ছেন।

নারুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. অধেন্দু কুমার রায় ও ডা. আলো চক্রবর্তী জানান, দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে তারা ২৪ ঘণ্টা গ্রামীণ পর্যায়ের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী মহোদয় তাদের নাম একবারও উল্লেখ করছেন না। সরকারের নির্দেশনায় তারা সব সময় কাজ করতে প্রস্তুত। কিন্তু কষ্ট পাচ্ছেন তাদের কর্মকাণ্ড তুলে না ধরায়। তারা কেউ পিছিয়ে নেই, জীবন বাজি রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং করোনা যুদ্ধে তারা জয়লাভ করবেন।

তারা আরও জানান, এখানে তারা গর্ভবতী নারী, প্রসূতি মা ও শিশুসহ সব ধরনের রোগীদের সেবা দেন। সেই সঙ্গে হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির পরামর্শও দেন। এছাড়াও রোগ অনুযায়ী ওষুধ দেন এবং রোগীদের কাছ থেকে নেন না কোন টাকা। দেশের এ দুর্যোগকালীন সময়ে সারাদেশে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের এভাবে সেবা দিতে অনুরোধ জানান তারা।

স্বাধীনতা ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ডা. সমীর কমুার হীরা বলেন, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা সারাদেশের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ জেলা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে সাধারণ রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে সারাদেশে ১৩ জন কর্মরত ডিপ্লোমা চিকিৎসক করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন এবং নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। এছাড়াও কয়েকদিন আগে করোনাভাইরাসে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন স্যার মারা গেছেন। এসব কারণে কিছু চিকিৎসক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারপরও আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গ্রাম গঞ্জে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

Advertisement

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ীতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার যারা আছেন তারা বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা সবাই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং ডাক্তারদের সহযোগিতা করছেন। এ দুর্যোগে আরও ভালোভাবে দায়িত্ব পালনে সব সময় তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে ডাক্তারদের সহযোগিতা করছেন।

রুবেলুর রহমান/আরএআর/এমকেএইচ