রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিট। টুট টুট আওয়াজে মোবাইল বেজে উঠল। মেসেঞ্জার ওপেন করতেই চোখের সামনে দুই-তিন লাইনের খুদে বার্তা। তাতে লেখা রয়েছে ‘ভাই একটা কিছু করেন, আমাদের বাঁচান, ১২ ঘণ্টা পিপিই পরে ডিউটি করলে করোনায় নয় গরমেই মরে যাব’।
Advertisement
খুদে বার্তার সঙ্গে গত ১৭ এপ্রিল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তারের স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে- স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক সমগ্র বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা নার্সিং কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রসমূহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত নার্সিং কর্মকর্তাদের ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটে দায়িত্ব বণ্টনপূর্বক অফিস আদেশের অনুলিপি ই-মেইলে পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
অফিস আদেশে আরও বলা হয়, প্রতিটি নার্সিং টিম একনাগাড়ে ৭ দিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিন হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর নিজ নিজ কর্মস্থলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক সাধারণ/করোনা ইউনিট বা ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করবেন।
খুদে বার্তা পাঠানোর পর মোবাইলে আলাপকালে ওই সিনিয়র স্টাফ নার্স কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নার্সিং অধিদফতর থেকে গণমাধ্যমে কোনো ধরনের কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা করতে গিয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ৮৯ নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন সন্তান-সম্ভবা নার্স রয়েছেন।
Advertisement
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত নার্সদের সার্বক্ষণিক পিপিই পরিধান করে দায়িত্ব পালন করতে হয়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত এই পোশাক পরলে এমনিতেই গরমে সিদ্ধ হয়ে যেতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে এ পোশাক পরে আট ঘণ্টা ডিউটি করায় দায় হয়ে পড়ে। নতুন করে নার্সিং অধিদফতর থেকে টানা ১২ ঘণ্টার আদেশ জারি হওয়ার ফলে নার্সদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
অনেকেই বলছেন, পিপিই পরে টানা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করলে করোনায় নয়, গরমে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতে হবে। এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাড়ছে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা। ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা আক্রান্ত হচ্ছেন।
রোগ তত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। দেশের জনগণকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ঘরের বাইরে পারতপক্ষে না আসতে নিষেধ করার পরেও তারা শুনছে না। এমতাবস্থায় দিনকে দিন রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তারা।
রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলোতেও কাঙ্খিতমানের চিকিৎসা সেবা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে বলে তারা মনে করছেন। এমতাবস্থায় চিকিৎসক ও নার্সরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসক ও নার্সদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হচ্ছে।
Advertisement
এই অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ডাক্তার-নার্সের সংকট দেখা দিতে পারে। সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্সের সংকট থাকায় এবং নতুন করে তাদেরকে একটানা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে বলায় অনেকেই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
এমইউ/এমআরএম