রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন কাওসার, নয়ন, আফাজ, অনন্ত ও আশিকুল। করোনার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় ভবনের নির্মাণকাজ। হাতে কাজ না থাকায় তারা বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পাওনা মজুরির প্রাপ্তি নিয়ে কিছুটা জটিলতা থাকায় তারা সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি যাওয়ার সময় ভবনের পানির পাম্প ও বেশ কয়েক কয়েল নতুন বৈদ্যুতিক তার চুরি করে নিয়ে যাবে। তাদের বিবেচনায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন।
Advertisement
আনোয়ারকে কিভাবে সরিয়ে দেয়া যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা আটতে থাকেন তারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ১৩ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ভবনের উপর থেকে নিচে নামেন তারা। একজন পাহারা দিতে থাকে মূল গেট। অপর চারজন গল্প করার ছলে ঢুকে পড়ে একা থাকা আনোয়ারের ঘরে। গল্পের এক পর্যায়ে তারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আনোয়ারকে। বেধে ফেলে তার হাত, পা ও মুখ। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভবনের আট তলায়। নাক ও মুখের বাধন বেশি শক্ত থাকায় নিস্তেজ হয়ে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণের ভেতর মারা যান আনোয়ার। মৃতদেহ ৮ তলায় রেখেই শেষ রাতে আনোয়ারের মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর হাকিম জসিম উদ্দিনের আদালতে এই পাঁচজন ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পুলিশ ও আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তারা এসব কথা বলেন। জবানবন্দি শেষ তাদের পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
সোমবার (২০ এপ্রিল) আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান আদালতে দেয়া জবানবন্দি নেয়ার বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নির্মানাধীন একটি ১০ তলা ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মো. আনোয়ার হোসেন (৫৫)। জমির মালিকের দীর্ঘদিনের পরিচিত ও বিশ্বস্ত ছিলেন তিনি।
১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় মোবাইলে কথা হয় গ্রামের বাড়িতে থাক স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে। সাংসারিক বিভিন্ন আলাপ শেষে স্ত্রী সংসার খরচের জন্য কিছু টাকা চান। আনোয়ার স্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দেবেন। নামাজ ও রাতের খাবার শেষে তিনি ঘুমোতে যান ভবনের নিচতলায় তার নির্ধারিত কক্ষে।
এদিকে দুইদিন পার হয়ে গেলেও আনোয়ারের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তার স্ত্রী। বাড়ির মালিকও আনোয়ারকে ফোনে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ১৫ এপ্রিল সকালে একটি ফোন পেয়েই পুরান ঢাকা থেকে ছুটে আসেন বাড়ির মালিক। এসে দেখতে পান ভবনের ৮ম তলার একটি কক্ষে পা বাধা অবস্থায় আনোয়ারের বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশ। এলাকাবাসী খবর দেয় শেরেবাংলা নগর থানায়। এরপর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করা হয়।
জেএ/এএইচ/এমএস
Advertisement