দেশজুড়ে

করোনায় বিপাকে কোম্পানীগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ

সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। পাথর কোয়ারি ও পর্যটন নির্ভর এ উপজেলার বেশিরভাগ মানুষই শ্রমজীবী। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে উপজেলার বেশিরভাগ মানুষের একমাত্র উপার্জনের স্থান পাথর কোয়ারি ও পর্যটন স্পটগুলো। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন উপজেলার লক্ষাধিক শ্রমজীবী মানুষ। তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

Advertisement

এই বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী অপ্রতুল। উপজেলায় মোট জনসংখ্যার বিপরীতে সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী অপ্রতুল না বলে অতি নগণ্য আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দি মানুষের পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবারেও খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। করোনাভাইরাসের মহামারির শুরু হওয়ার আগেই ২ মাস আগে থেকে হঠাৎ করে কোম্পানীগঞ্জের পাথর কোয়ারি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে লক্ষাধিক শ্রমিক, ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই অনেকটা বেকার এবং অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আসছিলেন।

এরইমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধ এবং এ থেকে উত্তোরণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাসহ সিলেট বিভাগ লকডাউন থাকায় ঘরবন্ধি হয়েপড়া মানুষজন খাবার সংকটের মুখোমুখি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

Advertisement

তবে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে যত ত্রাণ এসেছিল তা সবই বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ত্রাণ এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে। এজন্য তালিকাও করা আছে এবং সহায়তার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে দ্রুত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরে বন্দি থাকায় এদের ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। অনেকে অনাহারে কাটাচ্ছেন দিন। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় পৌনে ২ লাখ মানুষের বসবাস। এরমধ্যে ৬০ ভাগ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিম্নআয়ের। করোনাভাইরাস বর্তমানে কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি চলছে খাদ্যহীন মানুষের আহাজারি।

সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র। বাজারে প্রতি কেজি চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ টাকা। শাক-সবজির দাম না বাড়লেও বেড়েছে অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। এতে আরও বিপাকে পড়েন নিম্নআয়ের মানুষেরা।

অন্যদিকে উপজেলায় সরকারিভাবে এ পর্যন্ত তিন ধাপে ৬২ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। এ বরাদ্দ থেকে ছয় হাজার হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে মোট ৬০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৬৫৫ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা (১০ কেজি চাল, ৫ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ১ লিটার তেল ও ১ কেজি পেঁয়াজ) প্রদান করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

Advertisement

এদিকে অভিযোগ আছে, করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই সবার আগে হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানকে দেখা যাচ্ছে না জনগণের পাশে। রাজনৈতিক নেতারা সরকারিভাবেই ত্রাণের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় ব্যক্তিগত কোনো সহযোগিতার চিত্র দেয়া যাচ্ছে না।

জনগণের কথিত এসব বন্ধু রাজনৈতিক নেতাদের যথেষ্ট সামর্থ্য থাকার পরেও ব্যক্তিগতভাবে কর্মহীন ও নিম্নআয়ের মানুষের পাশে এগিয়ে না আসায় স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে ইসলামপুর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নের মানুষ বেশিরভাগই অসচ্ছল হতদরিদ্র। এ পর্যন্ত দুই হাজার পরিবারকে সরকারি এবং আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির সহায়তায় ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে।

নিজের ইউনিয়নকে একটি বড় ইউপি উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নেই খাদ্য সহায়তা পাওয়ার উপযোগী আছে প্রায় ১০-১২ হাজার পরিবার। ইউনিয়নের সদস্যদের নিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। দ্রুত আরও সরকারি ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন।

শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, আমি অনুরোধ করবো যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা যেন তাদের আশেপাশের মানুষদের সহায়তা করেন। স্থানীয় দানশীল ও ব্যবসায়ী সংগঠন মানবতার হাত বাড়ালে কর্মহীন অভাবি মানুষের খাদ্যের চাহিদা দূর হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য জানান, এ উপজেলায় তিন দফায় সরকারিভাবে ৬২ মেট্রিক টন চাল ও ২ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ সহায়তা থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কর্মহীন ও হতদরিদ্র ৬৫৫ পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। এরপর চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে ছয় ইউনিয়নে ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে দুইজন করে ট্যাগ অফিসার দায়িত্ব পালন করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে উপজেলার অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসেবে চাল ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি শিশুখাদ্য বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৭ হাজার টাকার শিশু খাদ্য হিসেবে মিল্ক ভিটার গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট, সুজি, সাগু ও মানসম্মত রেডিমেট ফুড ইত্যাদি খাদ্য স্থানীয়ভাবে ক্রয় করে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

ছামির মাহমুদ/এমএএস/এমএস