দেশজুড়ে

রাতে ঘরের দরজায় খাবার দিয়ে যায় কে?

দরজায় ডাক দিয়ে হাতে ধরিয়ে দেন ত্রাণের ব্যাগ। আবার অনেকের ঘরের দরজার সামনে ত্রাণের ব্যাগ রেখে আসেন। কেউ কেউ লোকটিকে দেখে অবাক হন। আবার অনেকেই জানেন না কে দিয়ে যায় ত্রাণের ব্যাগ। যাদের ঘরে খাবার নেই, কাউকে লজ্জায় বলতে পারছেন না। এমন মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেন ওই ব্যক্তি। রাতের আঁধারে ত্রাণ পেয়ে এসব মানুষ আনন্দিত হলেও ত্রাণ দেয়া লোকটিকে নিয়ে তাদের কৌতূহল।

Advertisement

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে অবশেষে জানা গেল রাতের আঁধারে ত্রাণ দিয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তি হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা। দিনে বসে তালিকা তৈরি করেন কর্মহীন মানুষের। রাতে ত্রাণ নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাজির হন তিনি। গোপনে অনেকের দরজায় ত্রাণের ব্যাগ রেখে আসেন।

শহরের পুরানমুন্সেফী এলাকার গৃহিণী সুমি চৌধুরী বলেন, স্বামী মারা গেছেন। এখন আমার কাজ নেই। সন্তানদের নিয়ে বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করছি। এ অবস্থায় ঘরে খাবার নেই। কিন্তু এই কথা কাউকে বলতে পারছি না। আবার মানসম্মান হারানোর ভয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারছি না। সবাই ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলতে চায়। এবার প্রথম ত্রাণ পেলাম। তাও ঘরের দরজার সামনে। লোকটি কে জানি না। এভাবে সবাই যদি রাতে ত্রাণ দিতো তাহলে আমার মতো অনেক মধ্যবিত্তের অনেক উপহার হতো।

শ্যামলী এলাকার চা বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, সবাই দরিদ্রদের বাড়িতে ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন। ছবি তুলছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের খবর কেউ রাখে না। আমাদের এখানে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি আমাদের মতো যারা কষ্টে আছেন; তাদের তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি রাতে খাবার পৌঁছে দেন। ত্রাণ চুরি আর ছবি তোলার এই সময়ে এমন উদ্যোগ সত্যিই মহান।

Advertisement

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত অসংখ্য পরিবার এখন অনেক কষ্টে আছে। বিশেষ করে চা বিক্রেতা বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা কারও কাছে বলতে পারছেন না লজ্জায়। আবার প্রকাশ্যে ত্রাণও নিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করেই দিনে এলাকাভিত্তিক তালিকা তৈরি করি। রাতে তাদের বাড়িতে গোপনে ত্রাণ পৌঁছে দেই। দরিদ্ররা বিভিন্নভাবে ত্রাণ পাচ্ছেন। কিন্তু মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত। এখন তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি সেই কাজটি করছি।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এএম/এমএস

Advertisement