করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কমলা লেবুর দাম। এক মাসের মধ্যে কমলা লেবুর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আপেল ও মাল্টার দামও। তবে কমলার তুলনায় মাল্টা ও আপেলের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে।
Advertisement
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর গত এক মাসে অন্তত চার দফা বেড়েছে কমলার দাম।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, করোনা আতঙ্কের আগে অর্থাৎ মার্চের শুরুতে কমলা লেবুর কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর তা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি হয়। এরপর তা বেড়ে হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। সেখান থেকে এক লাফে এখন দাম বেড়ে ৩০০ টাকা ছুঁয়েছে।
কমলা লেবুর পাশাপাশি করোনা প্রকোপের মধ্যে দাম বেড়েছে মাল্টা ও আপেলের। করোনার আগে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাল্টার দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-২০০ টাকা কেজি। অপরদিকে করোনার আগে যে আপেল ১০০ টাকা কেজি ছিল, তা এখন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আপেলের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।
Advertisement
কমলা, মাল্টা ও আপেলের এমন দাম বাড়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে একদিকে পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে আড়তে পর্যাপ্ত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ করোনার কারণে কমলা লেবু ও মাল্টার চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই হারে বাজারে এই দু’টি ফলের সরবরাহ নেই। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে।
যাত্রাবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কমলা লেবুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। আর মানভেদে আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। করোনার আগে এখানে কমলা লেবু ও মাল্টার কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা এবং আপেলের কেজি ৯০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
যাত্রাবাড়ির ফল বিক্রেতা খাদেম বলেন, এখন কমলা লেবুর মৌসুম না। সে হিসেবে কিছুটা দাম বাড়ার কথা। কিন্তু গত এক মাসে আমাদের ধারণার থেকে বেশি হারে কমলার দাম বেড়েছে। কমলার এত দাম বাড়বে তা ধারণাও করতে পারিনি।
এই ব্যবসায়ী বলেন, আমি ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ফলের ব্যবসা করছি। এর আগে কখনো এতে দামে কমলা লেবু বিক্রি করিনি। এবার করোনা আসার পর থেকেই কমলার দাম বাড়া শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে শেষ ১০ দিনেই কমলার দাম কেজিতে এক’শ টাকার মতো বেড়েছে।
Advertisement
বাজারটির আরেক ব্যবসায়ী মিন্টু বলেন, এখন বাজারে কমলা লেবুর পাশাপাশি মাল্টারও ভালো চাহিদা রয়েছে। তবে কমলার তুলনায় মাল্টার দাম কম বেড়েছে। করোনার আগে কমলা লেবু ও মাল্টা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আর এখন কমলা লেবু ২৮০ টাকা এবং মাল্টা ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, কমলা লেবুর তুলনায় মাল্টা বেশি সময় সংরক্ষণ করা যায়। তাছাড়া এখন কমলার থেকে মাল্টা সরবরাহ বেশি। আড়তে কমলা ও মাল্টা দু’টোই কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে কমলার থেকে মাল্টা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মাল্টার থেকে কমলার চাহিদা বেশি। এ কারণেই হয়তো কমলার দাম বাড়ার হার বেশি।
যাত্রাবাড়ি থেকে কমলা ও মাল্টা কেনা ইয়াসিন বলেন, করোনার শুরুতে দুই কেজি কমলা কিনেছিলাম ১২০ টাকা করে। আর মাল্টা কিনেছিলাম ১০০ টাকা করে। এখন সেই কমলা লেবুর কেজি হয়েছে ২৮০ টাকা এবং মাল্টার কেজি হয়েছে ১৭০ টাকা। করোনার কারণে এখন ফল কম পাওয়া যাচ্ছে, এ জন্য দাম একটু বাড়তে পারে। কিন্তু এত দাম বাড়া ঠিক হয়নি। কমলার দাম যদি মাল্টার মতো বাড়তো তাতে সমস্য ছিল না। তারপরও কোনো উপায় না থাকায় বাড়তি দামেই কমলা ও মাল্টা কিনতে হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ির থেকে তুলনামূলক বেশি দামে কমলা ও মাল্টা বিক্রি হতে দেখা যায় খিলগাঁও ও রামপুরা অঞ্চলে। এই অঞ্চলে কমলা লেবুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, যা করোনার আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর করোনার আগে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাল্টার বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
রামপুরায় ভ্যানে ফল বিক্রি করা হাসান বলেন, করোনার আগে আমরা কমলার কেজি বিক্রি করেছি ১২০ টাকা। কিন্তু আড়তে যে হারে দাম বেড়েছে, এখন ২৮০ টাকার নিচে বিক্রি করার কোনো উপায় নেই। আমরা কম লাভে বিক্রি করছি এ কারণে এই দামে দিতে পারছি। কিন্তু অনেকে দেখেন ৩২০ টাকা কেজিও বিক্রি করছে।
এই ব্যবসায়ী বলেন, আড়তে এখন ফল তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার গাড়ি নিয়ে ফল আনতে গেলে অনেক সময় পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে। অনেক রাস্তা ঘুরে ফল আনতে হচ্ছে। আবার বিক্রির সময়ও মাঝে মাঝে পুলিশ দাবড়ানি দিচ্ছে। পেটের দায়ে এমন পরস্থিতিতেও ফল বিক্রি করতে বের হতে হচ্ছে। আয় করতে না পারলে সংসার চলবে কিভাবে?
এমএএস/এমএফ/জেআইএম