দেশ মহা ক্রান্তিকালের মধ্যদিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। টানা লকডাউনে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান ছাড়া আর সব দোকানই বন্ধ। এতে শুধু ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে দোকানিরা। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফায়দা লোটায় ব্যস্ত। ২ টাকার জিনিস ১০ টাকা বিক্রি করছে। বিশেষ করে নানা বাহানায় চাল থেকে শুরু করে ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এর প্রভাব বেশি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করছেন, লকডাউনের কারণে পরিবহন ও শ্রমিক সংকটসহ নানা অজুহাত।
Advertisement
সরকার শুরু থেকেই বলে যাচ্ছেন, পর্যাপ্ত মজুত আছে। তবে কেন কৃত্রিম সংকট তৈরি হবে? ছোটবেলায় একটি প্রবাদ পড়েছিলাম, ‘যার আছে যত বেশি, সে চায় তত বেশি’। যার বেশি আছে, আমাদের দেশে সে আরও প্রত্যাশা করে। ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে আমরা সব সময়ই প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল। প্রশাসনও মাঠে কাজ করে, তা অস্বীকার করার কারণ নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অসাধুরা প্রশাসনের সাথে চোর-পুলিশ খেলেন।
অনেকটা এমন যে, প্রশাসন যখন মনিটরিংয়ে আসে; তখন পৃথিবীর সবচেয়ে ভদ্র ব্যবসায়ী, দানবীর ব্যবসায়ীর ভূমিকায় থাকেন অসাধুরা। আবার যখন প্রশাসন চলে যায়; তখন ভোক্তারা তাদের পুরোনো রূপ ঠিকই দেখতে পান। গ্রামীণ বাজারগুলোতে প্রতিটি দ্রব্যে ৫-১০ টাকা বৃদ্ধি করেছে দোকানিরা। ছোট দোকানিদের জিজ্ঞেস করলে তারা বড়দের দেখিয়ে দেয়, বড়দের জিজ্ঞেস করলে তারা আড়ৎদারদের দেখায়। এ যেন দেখাদেখির মহোৎসব।
অনেক সময় প্রশাসন হাতেনাতে ধরে জরিমানা করে। কোটিপতি ব্যবসায়ীকে হাজার টাকা জরিমানা করলেও কিছু আসে-যায় না। আবার অনেকে প্রশাসন চলে গেলে জরিমানার টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকেই নেয়। তাই বলছি, দুঃসময়ে যারা জাতির সাথে ঠাট্টা করে; তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। এদের জরিমানা না করে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা উচিত।
Advertisement
প্রথমে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা করুন। দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে লাইসেন্স বাতিল করে দিলেই কেল্লাফতে। অবশ্য এতে গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা থাকতে হবে। কারণ প্রশাসনের পক্ষে এত এত তথ্য সংগ্রহ করা বেশ কঠিন। গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে বাজার মনিটরিং সহজ হয়ে যাবে।
সামনেই রমজান মাস। এ মাসেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়াতে মজুত করার পায়তারা করবে। তাই এখনই একটু খোঁজ-খবর রাখতে হবে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন কাজ নয়। সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে হরিলুট করবে, সেটা তো হয় না। দেশের দুঃসময়ে যদি ন্যায্যমূল্যে দিতে না পারেন, তবে এদেশে ব্যবসা করার কী দরকার?
মুষ্টিমেয় কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী মিলে আবার সিন্ডিকেট করেন। দু’একটা গ্রামের বাজারে ছদ্মবেশে অভিযান চালালেই এদের চিহ্নিত করা যাবে। এসব সিন্ডিকেট একটি ফোনের মাধ্যমেই বাজারের চিত্র পাল্টে দিতে পারে। সবচেয়ে খারাপ লাগে তখন; যখন তারা ভোক্তাদের বলেন, ‘নিলে নেন, না নিলে না নেন!’
সবাই যে খারাপ এমন নয়। কিছু ভালো ব্যবসায়ীও আছেন। যারা তাদের নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রেখেই ব্যবসা করছেন। তারাই আসলে দুঃসময়ের যোদ্ধা। আর যা-ই হোক, তারা বেশি মুনাফার আশায় বিবেকের সাথে বেঈমানি করেননি। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তারা পাশে থেকেছেন। হতে পারে এমন যে, তাদেরও একটি তালিকা করা যেতে পারে। দুঃসময় কেটে গেলে অবশ্যই তারাও পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
Advertisement
এসইউ/এমএস