করোনাভাইরাস নিয়ে চীনকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক বিবৃৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, চীন যদি জেনে-শুনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে তবে তাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
Advertisement
করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তিনি বেইজিংয়ের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রতিদিন হোয়াইট হাউস থেকে সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনার কারণে যে মহামারি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা চীনে শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। ট্রাম্প বলেন, এই ভাইরাসের জন্য এখন পুরো বিশ্বকেই ভুগতে হচ্ছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাস বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
Advertisement
প্রথম দিকে চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেও গত কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেত সক্ষম হয়েছে চীন। ফলে চীনের চেয়ে এখন অন্যান্য দেশেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় সব দেশকে পেছনে ফেলে শীর্ষে আছে দেশটি। এমনকি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ধারে কাছেও নেই কোনো দেশ। অপরদিকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের পাল্লাও ভারি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৯১৩। অপরদিকে মারা গেছে ৩৯ হাজার ১৫ জন। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৬৮ হাজার ২৮৫। তবে ১৩ হাজার ৫৫১ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে। অন্যান্য দেশেও আক্রান্ত ও মৃৃত্যু বাড়ছে।
Advertisement
অপরদিকে, চীনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৮২ হাজার ৭৩৫ এবং মারা গেছে ৪ হাজার ৬৩২ জন। অপরদিকে, ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭৭ হাজার ৬২ জন। অর্থাৎ চীনে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছে। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চীন প্রকৃত সংখ্যা লুকাচ্ছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে তা নিয়ে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সিএনএন এবং ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, করোনার উৎপত্তি উহানের ল্যাবে হয়েছিল কিনা সেটি জানতে তদন্ত শুরু করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে এই ভাইরাসটি উহানের সামুদ্রিক খাবারের বাজারের পরিবর্তে ল্যাব থেকেই ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তারা।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৯৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৫ জনের। অপরদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৬৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা-সহ কংগ্রেসের রিপাবলিকান দলীয় কিছু সদস্য ভাইরাসটি চীনের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছে বলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে এনেছেন। মার্কিন সরকারের এই তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, চীনের উহানের ল্যাব থেকে দুর্ঘটনাক্রমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে; এমন একটি তত্ত্বের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দারা তদন্ত করছেন।
মার্কিন গোয়েন্দারা এখনও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তবে অন্য সূত্রগুলো বলছে, অতি সতর্কতা অবলম্বন না করায় অথবা দুর্ঘটনাবশত উহানের ল্যাবে এই ভাইরাসের সংস্পর্শে এসে হয়তো কেউ প্রথম সংক্রমিত হয়েছিলেন। পরে তার মাধ্যমে এই ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
এই ভাইরাস নিয়ে স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্যগুলো সংগ্রহ করছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। তবে গোয়েন্দাদের অনেকেই বলছেন, এই ভাইরাসের উৎপত্তির আসল কারণটি হয়তো কখনই জানা যাবে না।
তবে ল্যাব থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যে গুঞ্জন রয়েছে; সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে চীন সরকার। এমনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরাও ল্যাব থেকে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছেন।
মার্কিন কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, চীনকে একটি কড়া মূল্য গুণতে হবে। তবে তার আগে যুক্তরাষ্ট্র এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। এছাড়া ভাইরাসটির উৎপত্তির ব্যাপারে এখনও আরো অনেক তথ্য প্রয়োজন; যা গোয়েন্দারা সংগ্রহ করছেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্প চীনকে উদ্দেশ করে বলেছেন, যদি এটা কোনো ভুল হয়ে থাকে তবে ভুলতো ভুলই। কিন্তু যদি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করে থাকে তবে আমি নিশ্চিত করে বলছি যে, তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এমন কিছু ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তবে এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করোনাভাইরাস নিয়ে একে অন্যকে দোষারোপ করেছে। এছাড়া এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর প্রথম দিকে একে চীনা ভাইরাস বলে উল্লেখ করায় রীতিমত সমালোচনার শিকার হয়েছেন ট্রাম্প।
টিটিএন/জেআইএম