শরীয়তপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল ও জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে এ ধরনের সংকট বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
Advertisement
শরীয়তপুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত শরীয়তপুরে তিনজন নারীসহ ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনজন, জাজিরায় দুইজন ও ডামুড্যায় একজন। আর নড়িয়ার এক বাসিন্দা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।
এখন পর্যন্ত শরীয়তপুরে ১০৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাকি নমুনার ফলাফল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) শরীয়তপুর স্বাস্থ্য বিভাগে পাঠাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। এই হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকে অনেক বেশি। বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও সদর হাসপাতালে রোগী পাঠানো হয়। সদর হাসপাতালে অক্সিজেনের সিলিন্ডার আছে ৬০টি। এগুলো ব্যবহারের ফ্লমিটার আছে ১০টি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে দুটি করে সিলিন্ডার বাধ্যতামূলকভাবে দেয়ার কথা থাকলেও ফ্লমিটারের সংকটের কারণে তা দেয়া হয়নি। রোগীর চাপ বেশি থাকলে তখন এক ওয়ার্ডেরটা আরেক ওয়ার্ডে নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। জেলার বড় এই হাসপাতালের ইসিজি মেশিনটি নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে। নেবুলাইজার আছে আটটি। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও তা চালানোর টেকনেশিয়ান নেই। হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক ওই মেশিনে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেননি।
Advertisement
শরীয়তপুরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের অক্সিজেন দেয়ার সিলিন্ডারের ফ্লমিটার, এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, নেবুলাইজার মেশিন সংকট রয়েছে।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের ১২টি সিলিন্ডার থাকলেও ওইগুলো ব্যবহারের ফ্লমিটার আছে চারটি। একসঙ্গে চারজন রোগীকে অক্সিজেন দেয়া সম্ভব হবে। নেবুলাইজার মেশিন আছে দুটি। এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন চালু নেই।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের ১২টি সিলিন্ডার থাকলেও ওইগুলো ব্যবহারের ফ্লমিটার আছে তিনটি। একসঙ্গে তিনজন রোগীকে অক্সিজেন দিতে পারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। নেবুলাইজার মেশিন আছে দুটি। হাসপাতালটিতে এক্স-রে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নেই।
গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের ১৪টি সিলিন্ডার থাকলেও ওইগুলো ব্যবহারের ফ্লমিটার রয়েছে তিনটি। একসঙ্গে তিনজন রোগীকে অক্সিজেন দেয়া যায়। নেবুলাইজার মেশিন আছে দুটি। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এক্স-রে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নেই।
Advertisement
ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের ১২টি সিলিন্ডার আছে। ওই সিলিন্ডার থেকে রোগীদের অক্সিজেন দেয়ার যন্ত্র ফ্লমিটার আছে দুটি। নেবুলাইজার মেশিন আছে তিনটি। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নেই।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের আটটি সিলিন্ডার আছে। সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন সরবরাহের ফ্লমিটার আছে চারটি। একসঙ্গে চারজন রোগীকে অক্সিজেন দেয়া যায়। নেবুলাইজার মেশিন আছে দুটি। ৫০ শয্যার ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এক্স-রে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নেই।
নাম প্রকাশ্যে অনুচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ১৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে জাজিরা থেকে ঢাকার কুর্মিটোলায় পাঠানো হয়েছে। ওই রোগীকে বহনের জন্য বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য অ্যাম্বুলেন্সও পাঠানো সম্ভব হয়নি। তখন রোগীর স্বজনেরা ১২ হাজার টাকায় ঢাকা থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আনেন। রোগীর গরিব স্বজনদেরও ওই টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।
ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা খোকন বলেন, আমাদের চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট রয়েছে। তবুও আমরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনীর আহম্মেদ খান বলেন, নানা সংকটের মধ্য দিয়েই আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। আর যেসব চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট আছে তা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে।
শরীয়পুরের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, শরীয়তপুরে করোনা পরিস্থিতি এখনও খারাপের দিকে যায়নি, তাই অ্যাম্বুলেন্সও সেভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করা হবে। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বহনের জন্য আপাতত সদর হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হবে। আর চিকিৎসা সামগ্রীর কিছু সংকট আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি গাড়ি দিয়েছে, যা দিয়ে নমুনা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে এই মুহূর্তে গাড়ি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। চাহিদা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী যারা আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি যান, তাদের সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হচ্ছে।
ছগির হোসেন/আরএআর/জেআইএম