কালো রঙের একটি ভ্যানিটি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে শনিবার পড়ন্ত বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি সিটি কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলেন এক নারী। রঙিন প্রিন্টেড সালোয়ার-কামিজ পরিহিত ওই নারীর গলায় একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র ঝুলছিল।
Advertisement
ওড়না দিয়ে ভালো করে মাথা ঢেকে রাখা ওই নারীর মুখে মাস্ক, দুই হাতে পলিথিনের পাতলা গ্লাভস। চোখেমুখে রাজ্যের ক্লান্তির ছাপ। একটু পরই সন্ধ্যা ৬টা বাজবে। শুনসান নীরব রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছিলেন তিনি।
গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়ে নিজ থেকেই যেচে এসে কিছু সমস্যার কথা জানাতে চাইলেন। নাম মুফতি ইসলাম (আম্বিয়া)। ধানমন্ডিতে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের এমপিও-১ (মার্কেটিং প্রমোশন অফিসার) হিসেবে চাকরি করছেন। চাকরির অংশ হিসেবে তাকে প্রতিদিন বাংলাদেশ মেডিকেল ও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫২ চিকিৎসককে ভিজিট করতে হয়। কাকডাকা ভোরে উঠে সকাল সাড়ে ৮টার আগে হাজিরা দিয়ে কাজে বেরিয়ে পড়তে হয়। দুপুরে ঘণ্টা তিনেক অবসরে কল্যাণপুরের বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম নিয়ে ফের বিকেলে বের হয়ে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের ভিজিট শেষ করে অফিসের সিনিয়র বসের কাছে রিপোর্ট করতে হয়। এরপর বাসায় ফেরা।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, কল্যাণপুরের যে ফ্ল্যাটবাড়িতে ভাড়া থাকেন সে বাড়ির মালিক দুদিন আগে ডেকে নিয়ে তাকে বলেন, মিরপুরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তার দিনে দুবার বাসায় আসা-যাওয়াটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না অন্য ভাড়াটিয়ারা। বাইরে ঘোরাঘুরি করায় তার মাধ্যমে ফ্ল্যাটের সবাই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এমনটি হলে তাদের বাড়িঘর লকডাউন করা হবে, এলাকার কমিশনার বাড়িওয়ালাকে গালাগালি করবেন— এমনটি জানিয়ে নিতান্তই চাকরি করতে হলে দিনে একবারই বাইরে যেতে পারবেন বলে জানিয়ে দেন। তা না হলে সামনের মাসে বাসা ছেড়ে দিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেন।
Advertisement
‘এ কথা শোনার পর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। চাকরির ক্রাইটেরিয়াই হলো, সকাল সাড়ে ৮টা মানে ৮টা ২৯ মিনিটের আগেই অফিসে উপস্থিত হয়ে রিপোর্ট করা। এরপর কর্ম এলাকায় ছুটে যাওয়া। আগে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে বাসায় ফিরে খেয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিতাম। ফের বিকেলে বের হয়ে রাতে কাজ শেষে ফিরতাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে আতঙ্ক নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হয়। যানবাহন বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন কল্যাণপুর থেকে হেঁটে ধানমন্ডি অফিসে যেতে হচ্ছে। টাকা থাকলেও ভয়ে রিকশায় উঠি না, যদি সংক্রমিত হই। তাছাড়া রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় পথচলতেও ভয় পাই। এমন অবস্থায় বাসা ছাড়ার ভয়ে দুপুরে বাসায় যেতে পারিনি। হোটেল-রেস্টুরেন্ট খোলা না থাকায় কিছুই মুখে দেয়া হয়নি। সন্ধ্যার পর পপুলারে ডক্টর ভিজিট করে তবেই বাসায় ফিরব।’
বর্তমানে এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে যেখানে কষ্ট করে হেঁটে অফিস করছি সেখানে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের বাধার কারণে না খেয়ে দিনভর রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু আছে— এমন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, চাকরিটা রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত বাসাটাই ছাড়তে হবে। বলেই গন্তব্যের পানে ছুটলেন কর্মজীবী এই নরী।
এমইউ/এমএআর/এমকেএইচ
Advertisement