বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার শরণার্থীর ঢেউ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আছড়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএসসিআর। বর্ষাকাল শেষ হওয়ায় আগামী সপ্তাহগুলোতে এ দেশ দুটি থেকে এসব শরণার্থী বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান রুট ব্যবহার করে নতুন দেশের উদ্দেশ্যে নৌকায় চেপে বসতে পারেন। বৃহস্পতিবার ইউএনএসসিআরের বরাত দিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার থেকে মাছ ধরার ছোট নৌকায় চেপে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পাড়ি দেওয়া শরণার্থীর পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন বছরে শরণার্থীর সংখ্যা ২০১৪ সালের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেড়েছে। শুধু ২০১৪ সালে ৬৩ হাজার শরণার্থী দেশ ছেড়েছে। আর বর্ষাকালের পরে এসব শরণার্থীদের ঢেউ বেশি দেখা যায়।ইউএনএসসিআরের মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান গার্ডিয়ানকে বলেন, এ বছরও একই রকম শরণার্থীর ঢল দেখা যেতে পারে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চোরাকারবারীদের নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের প্রথমার্ধ্বে অন্তত ৩১ হাজার মানুষ এই সাগর পাড়ি দিয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। এছাড়া ২০১৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত এক লাখ মানুষ বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এদিকে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ২০১৫ সালে কমপক্ষে এক হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটেছে।বর্ষাকালে সাগর উত্তাল থাকার কারণে এই রুটে শরণার্থীদের দেশ ত্যাগের পরিমাণ কম ছিলো। কিন্তু এ মৌসুম শেষ হওয়ায় নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউএনএসসিআর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাগর পথে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা এসব শরণার্থীরা দালাল ও পাচারকারীদের ৫০ থেকে ৩০০ ডলারের চুক্তি করে। কিন্তু পরে তাদেরকে কোনো জঙ্গল অথবা দ্বীপে নিয়ে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। অনেক সময় শরণার্থীদের ভয়াবহ নির্যাতনও করা হয়। চলতি বছরে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে গণকবর থেকে শত শত শরণার্থীর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া ৭ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সম্মত হয়েছে। অনেক সময় শরণার্থীদেরকে নৌকায় খাবার ও পানির জন্য সংঘর্ষে লিপ্ত হতেও দেখা গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে, সাগরপথে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করা এসব শরণার্থীদেরকে যদি আশ্রয় দেওয়া না হয় তাহলে নৌকাগুলো ভাসমান কফিনে পরিণত হতে পারে।এসআইএস/এমএস
Advertisement