# সব ডালের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে# চাহিদার তুলনায় সরবারহ কম# রমজানকে পুঁজি করে সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ীরাআগামী ২৫ এপ্রিল (সম্ভাব্য) থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাস রমজান। পবিত্র এ মাসে ইফতারির উপকরণ তৈরিতে ব্যবহার হয় বিভিন্ন ধরনের ডাল। এ সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে ছোলা, মসুর, বুটসহ সব ধরনের ডালের দাম। তবে লাগবহীনভাবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে খেসারির ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
Advertisement
শনিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ রমজান ও করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে ডালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। চাহিদা বেশি সরবারহ কম তাই দাম বেড়েছে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, দেশে পর্যপ্ত খাদ্যের মজুদ আছে। তাই এবার রমজানে দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছে সরকার সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তারপরও রোজার আগেই বাড়লো সব ধরনের ডালের দাম। অন্যান্য নিত্যপণ্যও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। রমজানে এসব পণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ ভোক্তারা।
Advertisement
রাজধানীর মুগদা, মতিঝিল, খিলগাঁওসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার (১৮ এপ্রিল) পাড়া মহল্লার খুচরা দোকানে প্রতিকেজি ছোলা মানভেদে ৮০-৮৫ টাকা যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৭০-৭৫ টাকা। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ডাবলি ৫৫-৬০ টাকা, মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা।
কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ভালো মানের মসুর ডাল (ছোট দানা) বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। মোটা দানার মসুর ডাল পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা।
রোজার আগে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে খেসারি ডালের। গত এক সপ্তাহ আগের যে খেসারির ডাল বিক্রি হতো ৫৫-৬০ টাকা। আজ পাড়া মহল্লার দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে খেসারির দাম।
মুগদার খুচরা মুদি ব্যবসায়ী আল-আমিন জানান, গত সপ্তাহ পর্যন্ত খেসারি ডাল ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু পাইকারি বাজারে খেসারির দাম অনেক বেডে গেছে। আমাদের কেনায় পড়েছে ৯০ টাকা। তাই ৯৬-১০০ টাকায় বিক্রি করছি।
Advertisement
অপরদিকে, খুচরা ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, খেসারির ডাল সবসময় ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি করতাম। হঠাৎ করেই গত ১০-১২ দিন ধরে দাম বাড়ছে। সবশেষ গত পরশু পাইকারি বাজারে কেনায় পড়ে গেছে ৯০ টাকা। সব ধরনের ডালের দামই বেড়েছে জানিয়ে এ খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, এক তো ভাইরাসের আতঙ্ক আছে। সামনে রমজান উপলক্ষে মানুষ অনেক বেশি কিনছে। যার এক কেজি লাগবো সে ২-৩ কেজি কিনছে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর এ সময় ছোলার দাম বাড়ে কিন্তু এবার ছোলার দাম তেমন বাড়েনি। ছোলা ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি করছি।
পুরান ঢাকার বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, চলমান করোনা আতঙ্ক আবার সামনে রমজান। মানুষ চাহিদার তুলনায় বেশি কেনাকাটা করছে। এতে চাহিদা-সরবারহের ঘাটতি থাকায় ডালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
খেসারির দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি জানান, খেসারির ডাল বরিশাল, ফরিদপুর, যশোর, মাগুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদন হয়। এবার উৎপাদন কম। আবার যাও উৎপাদন হয়েছে ওই সব অঞ্চলের মোকামগুলো পর্যাপ্ত সরবারহ করছে না। এ কারণে দাম বেড়েছে।
এদিকে চলমান করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ত্রাণ হিসেবে অনেকেই মসুর ডাল ব্যবহার করছে। এ কারণে আসন্ন রমজানে ডালের সরবরাহে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়তি চাহিদার কারণে স্থানীয় বাজারে ইতিমধ্যে মসুর ডালের দাম বেড়ে গেছে।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মসুর ডালের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড টেরিফ কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় উৎপাদন এবং আমদানির মাধ্যমে পাঁচ লাখ টনের বাৎসরিক চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারাদেশেই নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে মসুর ডাল ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজারে ডালের দাম কিছুটা বেড়েছে। মাস খানেক আগেও বড় দানার মসুর ডাল ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। যা এখন ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দানার প্রতি কেজি মসুর ডাল ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে যা এখন ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সরবরাহে সমস্যা না হলেও আসন্ন রমজানে সংকট তৈরি হতে পারে এবং দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এজন্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। একই সঙ্গে বাজারে যাতে অযৌক্তিকভাবে দাম না বাড়ে সে বিষয়ে মনিটরিং জোরদারের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে মসুর ডালের মাসিক চাহিদা ৩৫-৪০ হাজার টন হলেও রমজানে চাহিদা দাঁড়ায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন।
মতিঝিল এলাকার জামান নামে এক ক্রেতা জানান, গত মাসে খেসারি ডাল কিনেছি কেজি ৫৬ টাকা দিয়ে। আজকে বাজারে এইটা বিক্রি করছে ১০০ টাকা। যে মসুরের ডাল ১২৫ টাকায় কিনেছি আজকে বাজারে সেই মসুর ডাল কিনলাম কেজি ১৪০ টাকা দিয়ে। সবকিছুরই দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা রমজান এলে সবসময়ই দাম বাড়ায় এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এক পক্ষ সব সময় বলবে বাজারের কোনো সমস্যা নেই। দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বাজারে গেলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
এসআই/এএইচ/জেআইএম