জলবায়ুর পরিবর্তনে পাল্টে যাচ্ছে রাজশাহী তথা এ অঞ্চলের পরিবেশ। পানির ভূগর্ভস্থ স্তর দিন দিন নিচে নামছে। শুকনো মৌসুমে অসহনীয় হয়ে উঠছে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা। সব মিলিয়ে মরুময়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মার তীরবর্তী শহর রাজশাহী মহানগর। শুকনো মৌসুমে পদ্মায় প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় এবং অব্যাহতভাবে কয়েক দশক ধরে পুকুর ভরাটের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এ অবস্থার। আর বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদদের পাশাপাশি ভাবতে শুরু করেছে খোদ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নিজেও। আর তাই প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। রাসিক কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুকুর চিহ্নিত করে ১৬টি পুকুর নিয়ে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ে এসব ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর সংরক্ষণে এরই মধ্যেই খসড়া প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছে রাসিক। নগরীর প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়নের এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০৬ কোটি ২৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় সংরক্ষণের পাশাপাশি নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা এবং ওই ১৬টি পুকুরের চারপাশে বিনোদন পিপাসুদের বসার স্থানের চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হবে। মহানগরীর চিহ্নিত ১৬টি পুকুরের মধ্যে রয়েছে, সপুরা শুকনা দিঘি, রাণীদিঘি, মহিষবাথান দিঘি, সাগরপাড়া দিঘি, মেহেরচন্ডি বড়দিঘি, কাজলা বড়দিঘি দাশপুকুর, নগরীর কাঁঠালবাড়িয়া গাইপুকুর, কাজিহাটা নিস্কৃতি ক্লিনিক সংলগ্ন পুকুর, কাদিরগঞ্জ দিঘি, উপশহর মারকাজ মসজিদ সংলগ্ন পুকুর, দক্ষিণ নওদাপাড়া তালপুকুর, ছোটবনগ্রাম মাঝিপুকুর, শিরোইল মঠপুকুর, ভদ্রা স্মৃতি অম্লান সংলগ্ন আব্দুল মালেকের পুকুর এবং মোহনপুর জেবের মিয়ার পুকুর।এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিজাম উল আযীম জাগো নিউজকে জানান, রাসিকের সাবেক মেয়র লিটনের সময় পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে রাজশাহীকে গড়তে ওই সময় এ প্রকল্প হাতে নেন তিনি। এ প্রকল্প বাস্তাবন হলে নগরীর পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি জীব পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি সবুজ নগরীর নান্দনিকতাও বাড়বে। মহানগরীতে এখনো পুকুর ভরাট চলছে এমন কথা স্বীকার করে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিজাম উল আযীম বলেন, প্রভাবশালীরা অনেকটাই প্রকাশ্যে পুকুর ভরাট করে চলেছেন। পুকুর ভরাট বন্ধে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান মেয়র। রাসিক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল জানান, প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। শিগগিরই ডিপিপি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় তোলা হবে। এর আগে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের যাচাই কমিটির সভায় অনুমোদিত হয় প্রকল্পটি। ওই কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পুর্নগঠিত ডিপিপি স্থানীয় সরকার বিভাগের হাত ঘুরে পরিকল্পনা কমিশনে যায়। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাসিক। দুটি মূল উদ্দেশ্য সামনে রেখে হাতে নেয়া হয়েছে প্রকল্পটি। ক্রমবর্ধিষ্ণু যাতায়াত ও যানবাহন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রাজশাহী নগর এলাকায় শক্তিশালী ও কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এর অন্যতম উদ্দেশ্যে। এছাড়া প্রকল্পটি জাতীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজতর সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধনের পাশপাশি নগরীর দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিলো ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। তবে চুড়ান্ত অনুমোদন না হওয়ায় প্রকল্পটি রয়েছে বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।উল্লেখ্য, পরিবেশবাদি সংগঠন রাজশাহী হেরিটেজের তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী নগরীতে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে পুকুর রয়েছে দুই শতাধিক। ৬০ এর দশকে এ সংখ্যা ছিলো চার হাজার ২৩৮। ১৯৮১ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭১ এ। আর ২০০০ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে ৭২৯টিতে। রাজশাহী হেরিটেজের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে নগরীতে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। তা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা একের পর এক পুকুর ভরাট করে গড়ে তুলছেন বহুতল ভবন। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ হুমকিতে পড়ছে তেমনি বাড়ছে ভূমিকম্প ঝুঁকিও। শাহরিয়ার অনতু/এসএস/এমএস
Advertisement