ধর্ম

করোনায় বদ্ধ ঘরকে মসজিদ বানালো ছোট্ট বালক

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আবদ্ধ প্রায় পুরো বিশ্বের সব মানুষ। ঘরের এ আবদ্ধ সময়ে অবস্থান করা ৮ বছরের ব্রিটিশ বালক ইয়াহইয়া। ঘরের একটি স্থানকে সে মসজিদের আদলে তৈরি করেছেন। যা মুমিন মুসলমানের জন্য এক মহা অনুপ্রেরণা।

Advertisement

হাদিসের নির্দেশনা হলো- যেখানেই নামাজের সময় হয়, সেখানেই নামাজ আদায় করা। কারণ যে স্থানে নামাজের সময় হয় সে স্থানটিই মুমিন মুসলমানের জন্য মসজিদ। হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে। আর তাহলো-হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রসুল! পৃথিবীতে কোন মসজিদটি সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল? তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম এরপর কোনটি (মসজিদ)। তিনি বললেন, আল মাসজিদুল আক্বসা বা বায়তুল মাক্বদিস। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, এ দুটি মাসজিদের নির্মাণকালের মধ্যে ব্যবধান কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। (তিনি আরো বললেন) যে স্থানেই নামাজের সময় হবে, তুমি সেখানেই নামাজ আদায় করে নেবে।’ (মুসলিম)

অন্য এক হাদিসে এসেছে- ‘যেখানেই নামাজের সময় হবে, তুমি সেখানেই নামাজ আদায় করে নেবে। কারণ সেটিও মসজিদ।’ (মুসলিম)

মহামারি করোনার কারণে বিশ্বের অধিকাংশ মসজিদে নামাজ ও বড় জামাআত স্থগিত রয়েছে। চাইলেই যে কেউ মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে পারছে না। রয়েছে রাষ্ট্রীয় বিধি-নিষেধ। এ সময় অধিকাংশ মানুষ ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ। বদ্ধ বাসায় আজান শুনে সেখানেই নামাজ আদায় করবে মুমিন। কারণ হাদিসের আলোকে বাসাও মুমিন মুসলমানের একটি মসজিদ।

Advertisement

ব্রিটিশ নাগরিক ইয়াহইয়া মুরাদ হোসাইন। করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরে আবদ্ধ। সে এ সময়টিতে নামাজ পড়ার জন্য ইতিমধ্যে নিজ ঘরের রুমকেই মসজিদে পরিণত করেছেন। মসজিদের আদলে অলংকৃত করেছেন পুরো রুমটিকে। যা যে কাউকে বাসায় ইবাদতের জন্য আলাদা স্থানে ডিজাইন করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

মসজিদ নির্মাণে মুরাদ প্রথমেই মোটা কাগজের উপর পেন্সিল দিয়ে স্ক্যাচ করেন। কাগজের ওপর করা স্ক্যাচ সে ডিজাইনে নিজ ঘরকে মসজিদে রূপ দিয়েছেন ইয়াহইয়া মুরাদ হোসানই। যা দেখতে পুরোপুরি মসজিদে মতোই।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের প্রায় সব মসজিদেই নামাজ পড়া স্থগিত। সে সময় ইয়াহইয়াহ নিজ ঘরে তৈরি করে মসজিদ। তার তৈরি মসজিদের ভেতরে রয়েছে নামাজ পড়ার জন্য দুইটি জায়নামাজ। মসজিদে নির্মাণ শেষে ইয়াহইয়ার উক্তি-‘আমার ঘর আমার মসজিদ’

ব্রেডফোর্ডে গ্রামার স্কুলে পড়ালেখা করা ৮ বছরের বালক ইয়াহইয়া নিজের নামাজের জন্য ঘরের মধ্যে একটি নির্ধারিত স্থানকে মসজিদের আদলে তৈরি করেছেন। সে পরিবারের সঙ্গে ব্রেডফোর্ডেই বসাবাস করে। তার এ কাজ বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত অঞ্চলের সব মানুষকেই নিজ নিজ বাসায় ইবাদতের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণে সহায়তা করবে। অনুপ্রেরণা যোগাবে।

Advertisement

সে কিভাবে ঘরের ভেতর মসজিদের আবহ তৈরি করেছেন জানতে চাইলে ইয়াহইয়া জানান-‘যখন শুনলাম করোনাভাইরাসে কারণে মসজিদে সাময়িকভাবে জামাআত স্থগিত। তখনই আমি আমার খেলার ঘরের একটি অংশে মসজিদ স্থাপনের চিন্তা করি। সে চিন্তা থেকেই খেলার ঘরের একে কর্ণার মসজিদে আদলে ইবাদতের পরিবেশ বা মসজিদ তৈরি করি।’

শুরুতেই মসজিদের ডিজাইন করার জন্য বাবা-মার কাছে কিছু কাগজের বোর্ড চেয়ে নেই। সে বোর্ড দিয়েই আমি মসজিদের ডিজাইন করি। কাগজের বোর্ডের ওপর জিহাইন ও পেইন্টিং করতে আমার এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। মসজিদে গম্বুজের আদলে তৈরি হিজাইনটিকে সবুজ রঙে অংকন করি।

৮ বছরের ইয়াহইয়া আরও জানায়, যখনই মসজিদে আজান হয় তখনই আমি আমার তৈরি মসজিদে আজান ও ইক্বামত দেই। আমার বাবা-মা আমার সঙ্গে আমার তৈরি মসজিদে নামাজ আদায় করেন।

নামাজের বাইরেও এ মসজিদটিতে আমি খেলাধুলায় সময় কাটাই। সেখানে শুয়ে বসে বই পড়ে অবসর সময় কাটাই। আমি মোল্লা নাসিরুদ্দিন তথা নাসিরুদ্দিন হুজ্জার মজাদার বুদ্ধিমান ও বোকার গল্পও পড়ি।

করোনায় আক্রান্ত এ অবসর সময়ে ইবাদত-বন্দেগিসহ পুরো সময়টি ৮ বছরের ছোট্ট বালক ইয়াহইয়া মুরাদ হোসাইন হতে পারে পুরো বিশ্ব মুসলিমের শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষের জন্য অনুপ্রেরণা।

এমএমএস/পিআর