রহমত বরকত মাগফেরাত লাভ এবং গোনাহ ও জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়ার মাস রমজান। আল্লাহর ভয় অর্জনের মাসও এটি। এ মাসে ধীরে ধীরে তাওকয়া বা আল্লাহর পরিপূর্ণ অর্জন করে মুমিন। এ উপকারিতাগুলো অর্জন করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই মাস আগে থেকেই রমজানের ইবাদত-বন্দেগির প্রস্তুতি নিতেন।
Advertisement
রমজান মাসজুড়ে মদিনার মসজিদ নববিতে সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বনবির নেতৃত্বে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকতেন। ইফতার-সাহরিও হতো মসজিদে নববিতে। এ মাসের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ কাজ হলো ইফতারের জন্য অন্য রোজাদারকে দাওয়াত দেয়া, পরস্পরকে ইফতার বিতরণ করা। হাদিসে এটিকে সর্বোত্তম কাজ কাজ বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-‘যে অন্য রোজাদারকে ইফতার করাবে, বা ইফতারি বিতরণ করবে সেও তার সমান সওয়াব পাবে। এতে ইফতারকারীর সাওয়াব থেকে কিছুমাত্র কমানো হবে না।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠার জন্য রমজান মাসব্যাপী ইবাদত বন্দেগির প্রতি জোর দিতে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি রমজানের দুই মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে পুরো রমজান মাস ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়েছেন। এটি ছিল তাঁর উম্মতের জন্য অন্যতম শিক্ষা।
রমজানজুড়ে বিশ্বনবি যে ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন, তার বিশেষ কিছু তুলে ধরা হলো-
Advertisement
>> পুরো রমজান আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করা।>> কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াত ও অধ্যয়নে নিয়োজিত থাকা।>> গরিব ও অসহায়দের ইফতার ও সাহরি করানো।>> রমজানের আগে থেকেই বেশি বেশি দান-সাদকা শুরু করা এবং রমজানে তা অব্যাহত রাখা।
>> অতিত জীবনের গোনাহ থেকে মুক্তি লাভে রাতের বেলায় নফল নামাজ পড়া।>> বিরতি দিয়ে দিয়ে লম্বা কেরাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করা।>> বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা।
>> আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশিকেও দান-সহযোগিতা করা।>> অসুস্থ মানুষের সেবা ও সহযোগিতা করা।>> পরিবার ও সমাজের লোকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
>> আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করা।>> মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মাগফেরাত কামনা করা।>> শুধু ইফতারে নয় বরং সাহরি ও ইফতারে খেজুর খাওয়া। ইফতারে খেজুর পাওয়া না গেলে সাদা পানি পান করার মাধ্যমে তা শুরু করা।
Advertisement
>> সাহরি ও ইফতারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা।>> সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা এবং শেষ রাতের শেষ সময়ে অর্থা] ভোর হওয়ার আগ মুহূর্তে সাহরি খাওয়া।>> রোজায় প্রত্যেক ওজুতে মেসওয়াক করা। তা দিনের যে কোনো সময়ে হোক তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
>> রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ না করা। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা এবং নিরবতা অবলম্বন করা। কেউ ঝগড়া করলে ‘আমি রোজাদার, আমি রোজাদার’ বলে তাকে রমজানের রোজার কথা বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেয়া।
>> রমজানের রাতের নামাজ অর্থাৎ ইশার নামাজ আদায়ের পর তারাবিহ নামাজ আদায় করা। কেউ এ নামাজকে সুন্নাত বলেছেন, আবার অনেকে মোস্তাহাব বলেছেন। তবে হাদিসে এসেছে-‘যদি কোনো ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ পড়ে তবে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে দেন।’ (সুবহানাল্লাহ)
>> রমজানের অন্যতম সুন্নাত পবিত্র নগরী মক্কায় গিয়ে ওমরা সম্পন্ন করা। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে এ বছর ওমরা করা অনিশ্চিত। ওমরা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘রমজানের একটি ওমরা আদায়ে রয়েছে হজের সমান সাওয়াব।’
>> রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করা। ইবাদতের উদ্দেশ্যে গোনাহ মাফ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ইতিকাফ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে কখনো ইতিকাফ থেকে বিরত থাকেননি। তিনি জীবনের শেষ রমজানে ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন।
>> রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে মর্যাদাপূর্ণ রাত ‘লাইলাতুল কদর’ অন্বেষণ করা। কেননা এ রাতের ইবাদত এক হাজার রাতের ইবাদতের সমান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজা পালনের পাশাপাশি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেখানো আমলগুলো যথাযথ আদায় করে রহমত বরকত মাগফেরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। বিগত জীবনের সব গোনাহগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস