দেশজুড়ে

আলোকিত হবে আজ দাসিয়ারছড়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় যাচ্ছেন আজ। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে আনন্দে উদ্বেলিত সাবেক ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষ। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে দাসিয়ারছড়ার পথ-ঘাট। তিনি সুইচ টিপে দাসিয়ারছড়ার ৬৪৩টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করবেন।তার এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার অপর ১০টি ছিটমহলের আরো এক হাজার ২৮৬টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। প্রায় ছয় যুগের অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে যাত্রা করবে বিলুপ্ত ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষ। তারা স্বপ্নকে ছঁয়ে দেখছে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের মধ্য দিয়ে। তার সফরকে সফল করতে চলছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন এবং ছিটমহলবাসীর আনন্দ মিছিল, সভা-সমাবেশসহ ব্যাপক প্রস্তুতি।১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ছিটবাসীরা আন্দোলন করেছে দীর্ঘ ৬৮ বছর। অবশেষে শেখ হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যে গত ১ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহল মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৬২টি ছিটমহলের জমির আয়তন ২৪ হাজার ২৬৮ দশমিক শূন্য ৮ একর। ছিট বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ পেয়েছে ১১১টি ছিটের জমির আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮ দশমিক শূন্য ৫ একর জমি। আর ভারত পেয়েছে ৭ হাজার ১১০ দশমিক শূন্য ৩ একর।এরমধ্যে কুড়িগ্রামের সাবেক ১২ ছিটমহলের আয়তন এক হাজার ৯০ দশমিক ৫৯ একর এবং জনসংখ্যা ৭ হাজার ৮২৭ জন। এরমধ্যে ফুলবাড়িতে সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় এক হাজার ৬শ ৪৩ দশমিক ৪৪ একর জমিতে জনসংখ্যা রয়েছে ৬ হাজার ৬০৮ জন এবং ভূরুঙ্গামারীতে ৩২২ দশমিক ৮৬ একর জমিতে এক হাজার ২১৯ জনের বসবাস এবং সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে ১৪ দশমিক ২৯ একর জমি জনশূন্য রয়েছে।চলতি বছরের যৌথ জনগণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের ১১১টি সদ্য বিলুপ্ত ছিটের লোকসংখা ৪১ হাজার ৪৪৯ জন। আর ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলায় বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের ১৮টি, লালমনিরহাটের ৩৩টিসহ মোট ৫১টি ছিটমহল রয়েছে।বাংলাদেশের ভেতরে কুড়িগ্রামে ১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টিসহ নীলফামারী জেলায় চারটি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। ৭৪’র মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের সঙ্গে এবং বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের সঙ্গে একীভূত হয়েছে।ছিটবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন করে মূলস্রোরােত ধারায় সম্পৃক্ত করতে সরকার বিশেষ উন্নয়ন প্যাকেজ ঘোষণা করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ায় যাবেন। পরে কুড়িগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিস্থাপন করে দুপুর আড়াইটায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।দীর্ঘ ৬৮ বছর অন্ধকারে থাকা মানুষগুলোর মাঝে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়ে উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে আসার সূচনা করবেন। ছিটবাসীদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে খোলামেলাভাবে মতবিনিময় করবেন তিনি।এদিকে বিশেষ মাধ্যম থেকে জানাযায় যে প্রধানমন্ত্রীর দাসিয়ারছড়ায় মুজিব-ইন্দ্রিরা নামে ইউনিয়ন কমপ্লেক্সর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সেটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হচ্ছেনা।সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার আলতাফ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি আসলে সাবেক ছিটবাসীদের মা। সদ্য নাগরিকত্ব পাওয়া ছিটমহলের মানুষগুলো এই প্রথম কোনো সরকার প্রধানের সান্নিধ্য পাবে। এটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। আমাদের মাকে বরণ করতে দাসিয়ারছড়াবাসী বাদেও দেশের অপর বিলুপ্ত ছিটমহলগুলো থেকে মানুষজন আসবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করে অধির আগ্রহে বসে আছি।কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাফর আলী জানান, আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামের মানুষকে ভালোবাসেন। জননেত্রীর আগমনে কুড়িগ্রামের মানুষ খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে পড়েছে। আমরা তার নিকট কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক উন্নয়নের দাবি করবো।নাজমুল হোসেন/বিএ

Advertisement