মা হওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। কিন্তু এখন এমন এক সময় যখন, এই আনন্দও অনেকটা দুশ্চিন্তায় পরিণত হচ্ছে। এক অজানা উদ্বেগ যেন মনের ভেতর কাঁটার মতো বিঁধছে। যারা প্রথমবারের মতো মা হতে চলেছেন, অনভিজ্ঞতার কারণে তারা আরও বেশি মানসিক উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
Advertisement
হবু মাকে নির্দিষ্ট সময় পর পর কিছু টেস্ট করানো ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। কিন্তু এই সময়ে সব রকম চিকিৎসা সহজলভ্য নয়। আবার চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়ার আগেও চিন্তা করতে হচ্ছে। তাই হবু মাকে একান্তই প্রয়োজন না পড়লে বাইরে বের হতে নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বাড়তি সাবধানতা নেওয়া উচিত।
একজন হবু মাকে তার গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাস সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ, যেমন ফলিক অ্যাসিড ও অন্য ওষুধ খেতে খেতে হবে নিয়ম মেনে। প্রতিবার খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। নাকে, মুখে, চোখে হাত দেয়া যাবে না। বাড়িতে কারও হাঁচি, সর্দি হলে তার কাছাকাছি যাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে হবু মা কে অন্য ঘরে থাকতে হবে, নাক মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখা দরকার।
Advertisement
আমেরিকান কলেজ অব অবস্ট্রেটিশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলজি’ হবু মা এবং সদ্য মায়েদের জন্য সার্স কোভ-২ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটা গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে। সেখানেও বাড়িতে থাকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে লকডাউনের সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকককে ফোন করে সমস্যার কথা জানাতে হবে।
এই সময় আলট্রাসোনোগ্রাফি-সহ অন্যান্য পরীক্ষার দিন পূর্ব নির্ধারিত থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে নিতে হবে। খুব সমস্যা না হলে কয়েক দিন পরে টেস্ট করা যেতে পারে।
চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে যাওয়া উচিত। মাস্ক পরাও বাধ্যতামূলক। হাসপাতালই হোক অথবা ক্লিনিক, যেকোনো মানুষের থেকে হবু মাকে ৬ ফুট দুরে থাকতে হবে। বাড়ি ফিরে পরিষ্কার হয়ে, পোশাক সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই সময় মোবাইল, আংটি, ঘড়ির ব্যবহার কমিয়ে দিন। এগুলো থেকেও কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
হবু মা এবং যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন, তাঁদের ভয় ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। সঙ্গে যোগ হয়েছে কোভিডের আতঙ্ক। তবু এর মধ্যেই ভাল থাকতে হবে। ফিজিক্যাল ডিস্ট্যানস বজায় রাখতে হলেও টেলিফোনে বন্ধু ও ভাই-বোনদের সঙ্গে গল্প করতে পারেন।
Advertisement
হবু মা বা যারা সদ্যই মা হয়েছেন তাদের এই সময়ে মন ভালো রাখা জরুরি। ফোনে আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। ভালো বই পড়লে মন ভালো থাকে, দুপুরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বই পড়ুন। বাড়ির হালকা কাজকর্ম, রান্না সবই করতে পারেন।
টিভি দেখতে পারেন, তবে করোনা সংক্রান্ত খবর মনের উপর চাপ দিলে তা দেখবেন না। কোনোরকম শারীরিক সমস্যা হলে ঝুঁকি না নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে ফোন করতে হবে।
যদি সর্দি কাশি হয় গরম পানিতে গার্গল করবেন, অসুখটা বাড়তে দেবেন না। কিন্তু যদি এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকে এবং ঠোঁট বা মুখে নীলচে আভা দেখা দেয়, তখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা ভাবতে হবে ও প্রয়োজনে পরীক্ষা করাতে হবে। কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে ভেঙে পড়বেন না। বরং কিছু নিয়ম মানলে ও সাবধানে থাকলে এই অসুখ সেরেও যায়।
আশার কথা হচ্ছে, সদ্যজাত শিশুর বেলায় এই ভাইরাস মারাত্মক আকার নিতে পারছে না। ‘দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স’-এ একজন করোনা পজিটিভ প্রসূতির স্বাভাবিকভাবে প্রসব হয়েছে, শিশুটির কোভিড-১৯ নেগেটিভ।
প্রমাণ মিলেছে, মায়ের দুধে করোনাভাইরাস থাকে না। তাই করোনা আক্রান্ত মায়েরও সন্তানকে দুধ দিতে কোনো বাধা নেই।
এইচএন/এমএস