খেলাধুলা

গতির ঝড়ে আলোড়ন তোলা ১০ বোলারের গল্প

আচ্ছা বলুন তো সবসময়ের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলারের নাম কী? বেশিরভাগের উত্তর হবে, শোয়েব আখতার। এই পাকিস্তানিই সবসময়ের দ্রুতগতির বোলার। পাশাপাশি ব্রেট লি’র নামও বলবেন অনেকেই। কারও কারও চোখে ব্রেট লিও কম যাননি।

Advertisement

আসলে এ দুজনার মধ্যে কে বেশি জোরে বল করেছেন? কার বলের গতি সর্বোচ্চ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ছুঁয়েছে? নাকি তাদের ছাপিয়ে আরও কেউ আছেন? থাকলে তারা কারা? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসলে কারা সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার? তা নিয়ে রাজ্যের কৌতূহল আছে ক্রিকেট অনুরাগিদের।

প্রজন্ম প্রজন্মকে টানে। এখন যারা ক্রিকেট দেখেন নিয়মিত তারা বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের কছে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক আর ইংল্যান্ডের জোফরা আর্চার বেশ দ্রুতগতির বোলার। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা কিংবা পাকিস্তানের তরুণ তুর্কি নাসিম শাহরাও কম যান না।

কিন্তু ইতিহাস, পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। এখন যারা খেলছেন, সেই সব ফাস্টবোলারদের মধ্যে কেবল অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কই আছেন সব সময়ের দ্রুততম ১০ গতিময় বোলারের তালিকায়। আসুন দেখে নেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুতগতির ১০ ফাস্টবোলার কারা-

Advertisement

মাইল মিটার সাক্ষী দিচ্ছে, এখন পর্যন্ত দ্রুততম ডেলিভারিটি শোয়েব আখতারের করা। এ পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারের সবচেয়ে দ্রুততম ডেলিভারিটি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার (১০০.২ মাইল) গতির। সেটা ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

এছাড়া রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসখ্যাত এ পেসার দুইবার ১০০ মাইল গতির মাইলফলক ছুঁয়েছেন। এর মধ্যে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ১৬১.৩ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিটি ছিল সবচেয়ে দ্রুতগতির।

দুই অজি ফাস্ট বোলার ব্রেট লি আর শন টেইটও দ্রুততম ডেলিভারি ছোড়ায় শোয়েব আখতারের খুব কাছে। তাদের দুজনের সবচেয়ে দ্রুতগতির ডেলিভারিটি ছিল ঘণ্টায় ১৬১.১ কিলোমিটার (১০০.০১ মাইল) গতির। এর মধ্যে ব্রেট লি ২০০৫ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার দ্রুতগতির বলটি করেছিলেন। শন টেইটের দ্রুততম ডেলিভারিটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

এই দুই অজি ফাস্ট বোলারের পূর্বসুরি ‘গতি সম্রাট’ আখ্যা পেয়েছিলেন যিনি, সেই জেফ থমসন ১৬০.৬ (৯৯.৮ মাইল) কিলোমিটার গতিতে বল করে দ্রুততম ডেলিভারি ছোড়ায় আছেন চার নম্বরে। ১৯৭৫ সালে পার্থে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ গতিতে বল করেছিলেন। তার খুব কাছেই অবস্থান আরেক অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের, ১৬০.৪ কিলোমিটার (৯৯.৭ মাইল) প্রতি ঘণ্টায়। পার্থের ওয়াকায় নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ঐ গতিতে বল করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক।

Advertisement

এছাড়া ছয় নম্বরে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান গ্রেট অ্যান্ডি রবার্টস। ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সোনালী দিনের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা রবার্টসের সবচেয়ে দ্রুতগতির বলটি ছিল ১৫৯.৫ কিলোমিটার (৯৯.১ মাইল) প্রতি ঘণ্টার। ঐ ডেলিভারিটি এখনও পর্যন্ত কোন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলারের ছোড়া সবচেয়ে দ্রুতগতির ডেলিভারি। সে রেকর্ড এখনও টিকে রয়েছে। ১৯৭৫ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ ডেলিভারিটি করেছিলেন রবার্টস।

আরেক ক্যারিবীয় ফিদেল এডওয়ার্ডসও কম যাননি। তার আছে ১৫৭.৭ কিলোমিটার (৯৭.৯ মাইল) গতির বোলিংয়ের রেকর্ড। ২০০৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ঐ দ্রুতগতির বলটি করেছিলেন ফিদেল এডওয়ার্ডস।

দ্রুতগতির বোলিংয়ে আট নম্বর নামটিও আরেক অস্ট্রেলিয়ানের; মিচেল জনসন। এই অজি ফাস্ট বোলার সর্বোচ্চ ১৫৬.৮ কিলোমিটার (৯৭.৪ মাইল) গতিতে বল করেছিলেন। তার দ্রুততম ডেলিভারিটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে; ২০১৩ সালে মেলবোর্নের এমসিজি মাঠে করা।

এ তালিকার নয় নম্বরে আছেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ সামি। ক্যারিয়ারের বড় সময় ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশে বল করা সামির দ্রুততম ডেলিভারিটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৩ সালে শারজায়। সে ম্যাচে মোহাম্মদ সামির একটি বলের গতি উঠেছিল ১৫৬.৪ কিলোমিটার (৯৭.১ মাইল) প্রতি ঘণ্টা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ১০ নম্বর ডেলিভারিটি একজন কিউই ফাস্ট বোলারের, শেন বন্ড। তিনিও ১৫৬.৪ কিলোমিটার (৯৭.১ মাইল) গতিতে বল ছুড়ে তার দেশের দ্রুততম বোলিংয়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দশম দ্রুতগতির ডেলিভারি ছোড়ার কৃতিত্বের অধিকারি হয়ে আছেন।

তার মানে দেখা যাচ্ছে, মাইল মিটারে যে ১০ দ্রুততম ডেলিভারি আছে, তার পাঁচটি ছুড়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলাররা (ব্রেট লি, শন টেইট, জেফ থমসন, মিচেল স্টার্ক ও মিচেল জনসন)। এছাড়া দুজন ওয়েস্ট ইন্ডিজ (অ্যান্ডি রবার্টস ও ফিডেল এডওয়ার্ডস) ও পাকিস্তানের (শোয়েব আখতার ও মোহম্মদ সামি) এবং নিউজিল্যান্ডের শেন বন্ড আছেন এ তালিকায়।

শোয়েব-ব্রেট লির চেয়েও জোরে বল করতেন টাইসন!

তবে একটি কথা, ওপরে যাদের কথা বলা হলো, সেই দশজনের বাইরে আর কেউ ১৫৫-১৬০ কিলোমিটার গতিতে বল করেননি- তা ভাবা ঠিক হবে না। কারণ ১৯৭৫ সালের আগে সেভাবে বলের গতি মাপার যন্ত্র ছিল না। কাজেই সত্তরের দশকের আগের কোনো রেকর্ড লিপিবদ্ধ নেই।

এর আগেও কেউ কেউ অনেক জোরে বল করতেন। এর মধ্যে সর্বাধিক উচ্চারিত নামটি হলো ফ্র্যাংক টাইসন। ইংল্যান্ডের ফ্র্যাংক টাইসনকেও অন্যতম দ্রুতগতির বোলার হিসেবে ধরেন কেউ কেউ। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত (১৯৫৪ সালের আগস্ট থেকে ১৯৫৯ সালের মার্চ) মাত্র ১৭ টেস্ট খেলা এই ইংলিশ ফাস্ট বোলারকে ঐ সময়েরই শুধু না সবসময়ের অন্যতম দ্রুতগতির বোলার ভাবা হয়।

সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ও বিশ্বনন্দিত ক্রিকেট বিশ্লেষক, ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোর চোখে টাইসনই তার দেখা সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার। তবে দূর্ভাগ্য টাইসনের। তার খেলোয়াড়ি জীবনে বলের গতি মাপার যন্ত্র বা মাইল মিটার ছিল না। তাহলে বোঝা যেত, টাইসনের বলের সত্যিকার গতি কত ছিল?

১৭ টেস্টে ৭৬ উইকেট শিকারী এ ইংলিশ ফাস্ট বোলারের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার ছিল অসাধারণ। ২৪৪ ম্যাচে উইকেট ৭৬৭টি। ইনজুরি বাঁধা হয়ে না দাঁড়ালে হয়তো ক্যারিয়ারটা আর বড় হতে পারতো। কিন্তু ইনজুরির কারণে ৩০ বছর বয়সেই ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে হয় টাইসনকে।

এছাড়া পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুস, মোহাম্মদ জাহিদের কথা শোনা যায়। তারাও যথেষ্ঠ জোরে বল করতেন। তবে ওপরে যে ১০ জনের কথা বলা হলো ওয়াকার কিংবা মোহাম্মদ জাহিদের বলের গতি মাইল মিটারে তাদের মত ওঠেনি। তাই তারা সেরা দশে জায়গা পাননি।

এআরবি/এসএএস/এমএস