নিজ দেশে সার্জিক্যাল মাস্ক, করোনা টেস্টিং কিটসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী রফতানিতে চীনে অবস্থিত আমেরিকান কোম্পানিগুলোর ওপর বাধানিষেধ আরোপ করেছে বেইজিং। করোনার এই ক্রান্তিকালে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করে নিজ দেশের পাশে দাঁড়াতে চাইলেও পারছে না এই কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির তালিকায় ৩এম ও পারকিনএলমারও রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এই তথ্য জানিয়েছে।
Advertisement
চীনে অবস্থিত মার্কিন কোম্পানি পারকিনএলমার ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন (১৪ লাখ) কোভিড-১৯ টেস্ট কিট রফতানি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রে। তবে এতে অনুমতি দিচ্ছে না বেইজিং। এসব চিকিৎসাসামগ্রী নিজের দেশের জন্য চায় চীন। মার্কিন এই কোম্পানিগুলোর তৈরি করা সাজিক্যাল মাস্ক, কিট চীনের কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক ভালো। এজন্য এসব চিকিৎসাসামগ্রী হাতছাড়া করতে চাইছে না বেইজিং।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালকে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, কয়েক মিলিয়ন টেস্ট কিট আটকা পড়ে আছে চীনে তাদের কারখানাগুলোতে। তবে এসব চিকিৎসাসামগ্রী রফতানিতে ছাড় দিচ্ছে না চীন।
নিজে দেশে ১৪ লাখ টেস্ট কিট পাঠাতে চায় ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক মার্কিন স্বাস্থ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পারকিনএলমার ইনকরপোরেশন। তবে বেইজিংয়ের কেন্দ্রীয় সরকারের বাধার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে চীনের সুঝৌ কারখানায় আটকা পড়ে আছে এসব কিট।
Advertisement
রিয়েল-টাইম টেস্ট কিট উদ্ভাবন করেছে পারকিনএলমার। কোম্পানিটি ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছে, তারা এসব কিট যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির জন্য বেইজিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই সংকট তৈরি হয়েছে এন-৯৫ রেসপিরেটরি মাস্কের। তাই নিজ দিশে এন-৯৫ রেসপিরেটরি মাস্ক পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ৩এম। তবে তাদেরকেও এ বিষয়ে এখনও ক্লিয়ারেন্স দেয়নি বেইজিং।
মাস্ক রফতানিতে কোম্পানিটির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা তুলে নিতে বেইজিং থেকে নির্দেশনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সাংহাইয়ের ভাইস মেয়র।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এরপর বিশ্বের দুইশোর অধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। মারা গেছে প্রায় দেড় লাখ। চীনে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৩ হাজারের বেশি। আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার।
Advertisement
তবে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-৬ লাখ ৭৭ হাজার, আর মারাা গেছে ৩৪ হাজার ৬১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজারের বেশি, যেখানে মারা গেছে ২ হাজার ১৭৪ জন।
তার মানে, এই মুহূর্তে করোনা সবচেয়ে বিপর্যয় ডেকে এনেছে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রে। এমনকি টেস্ট কিট, সার্জিক্যাল মাস্ক, গাউনসহ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে।
ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল বলছে, বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশের বেশি মাস্ক, গ্লোভস, গগলস (বিশেষ চশমা), ভিজর (এক ধরনের মাস্ক বা মুখোশ) উৎপাদন করে চীন। তারপরও এই মুহূর্তে এসব চিকিৎসাসামগ্রী তার দেশের হাতছাড়া হোক, চায় না চীন।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি রূপ নেয়ার পরপরই এজন্য চীনকে দোষারোপ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও বিভিন্ন বক্তৃতায় বলতে শোনা যায়, চাইনিজ ভাইরাস। আমেরিকানরা মনে করেন, উহানের গোপন গবেষণাগার থেকে ফাঁস হয়েছে এই ভাইরাস। তবে বেইজিংয়ের পাল্টা অভিযোগ, মার্কিন মিলিটারি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে করোনা।
এসআর/এমএস