মতামত

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সাংবাদিকদের জন্যও প্রণোদনা চাই

আসাদুজ্জামান ফারুক

Advertisement

করোনাভাইরাসের কারণে এখন আতঙ্কিত বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব। এ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বিশ্ব সম্প্রদায়। থমকে গেছে অর্থনৈতিক কাজকর্ম, থমকে গেছে জীবনযাত্রা। চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল আর দুঃসংবাদ। অদৃশ্য করোনাভাইরাস যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেটা সামাল দিতে পৃথিবীর উন্নত ও মহাশক্তিধর দেশগুলোও হাবুডুবু খাচ্ছে। স্বভাবতই এই প্রভাবের বাইরে থাকতে পারছে না বাংলাদেশও। ক্রমাগত বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাড়ছে বেকারত্ব ও মানুষের ক্ষুধা। মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণ হারায়নি বলা যায়। দেশের মানুষকে জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে নির্দেশ দেয়া হলেও এখনো অনেক মানুষ সরকারি নির্দেশ মানছে না। এ কারণে আমাদের দেশের মানুষ বিপদমুক্ত নয়। এশিয়ার মধ্যে আমাদের দেশ একটি গরিব দেশ। আপনার দল পর পর তিনবার ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মধ্য ঘাতকরা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। স্বাধীনতাবিরোধীরা এদেশকে আবারও তাদের কবলে নিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও দুঃখ-দুর্দশা দূর করা। কিন্তু তাকে বাঁচতে দিলো না ঘাতকরা। দেশের মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থনে আপনি বারবার সরকার গঠন করে আপনার বাবার লালিত স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে তথ্যপ্রবাহ সচল রাখতে সাংবাদিকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতির তথ্য পরিবেশন করে সচেতন করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত সাংবাদিক সমাজ। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এখন প্রতিদিন নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অধিকাংশ সাংবাদিকের সুরক্ষায় পিপিই, গ্লাভস, স্যানিটাইজার নেই। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকরা মাঠে-ঘাটে এখন কাজ করছেন। বিশেষ করে মফস্বল সাংবাদিকরা সবসময় অবহেলিত। অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান মফস্বল সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন বা সম্মানী দেয় না। ঢাকাতে যারা ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারা মোটামুটি বেতন পেয়ে থাকেন। কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকদের দুঃখ-দুর্দশার শেষ নেই। অনেকে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মফস্বল সাংবাদিকদের অনেকের ঘরে ঠিকমত ভাত-কাপড় নেই। তারপরও তারা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই কয়েকজন সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

Advertisement

করোনা পরিস্থিতিতে দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই প্রায় বন্ধ। অধিকাংশ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে আছে। তাই সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যাও অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে। দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে সংবাদপত্র ছাপা ও সরবরাহের কাজ। সেজন্য কয়েকটি পত্রিকা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হকার-এজেন্টরাও নিরাপত্তার কারণে পত্রিকা বিতরণ করতে পারছেন না। ফলে সংবাদপত্রের সাথে জড়িত হকার, এজেন্ট, প্রেস কর্মচারী, সাংবাদিকদের জীবন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। দেশের সাংবাদিকদের বিরাট অংশ এখন চরম সংকটে রয়েছেন।

দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে বিভিন্ন সেক্টরের কর্মজীবী ও কর্মহীন মানুষের জন্য আপনি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নানা খাতে প্রণোদনা ঘোষণা ও বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু দেশের সাংবাদিকদের জন্য এখনো কোনো প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়নি। সাংবাদিকদের মধ্যে সবাই বিত্তশালী নন। অনেকেই মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের কর্মী। দেশের করোনা পরিস্থিতিতে এখন প্রশাসন, চিকিৎসক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা সরকারি চাকরি করে তারা সকলেই প্রতিমাসের বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু সংবাদকর্মীদের অনেকেই নিয়মিত বেতন-ভাতা এখন পাচ্ছেন না। আবার পেলেও যথেষ্ট নয়। পেটে ক্ষিধে রেখে ঠিকমতো কাজ করা যায় না।

করোনা নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করে গণমাধ্যমে খবর পাঠিয়ে দেশ ও জনগণকে সচেতন করার কারণেই ভাইরাসটি এদেশে এখনো ভয়াবহ রূপ নেয়নি বলে আমরা সাংবাদিকরা মনে করছি। অথচ দেশের দুঃসময়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্যপ্রবাহ সচল রাখতে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করলেও কেবল এই সাংবাদিকদের জন্যই প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়নি। আমাদের সাংবাদিকরা প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আপনি মানবতার নেত্রী, আপনি জাতির পিতার কন্যা, আপনার মহানুভবতা সাংবাদিকরা প্রত্যাশা করেন। সাংবাদিকদের প্রণোদনার বিষয়টি আপনি ভেবে দেখবেন, আমি বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।

Advertisement

এইচএ/বিএ