কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় এক মাদরাসা শিক্ষককে রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করার ঘটনার এক সপ্তাহ পর অবশেষে থানায় হত্যার চেষ্টা মামলা হয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বহুল আলোচিত মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন মারধরে আহত শিক্ষক মাওলানা আজিজুর রহমান।
মামলাটি থানায় রেকর্ড করার পরই পুলিশের একাধিক টিম ওই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার থানা পুলিশের ওসি মো. জহিরুল আনোয়ার।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, পারিবারিক কলহের কারণে ৪ সন্তানের জননী আমেনা আক্তার গত ৯ এপ্রিল সকালে ওই শিক্ষকের (স্বামী) বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। পরে দুপুরের দিকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আবদুল মতিন ওই শিক্ষককে বাড়ি থেকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান।
Advertisement
তিনি চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাওয়ার সময় তার মেয়ে দাখিল শ্রেণির ছাত্রী আরিফাতুন নুর এবং চাচাতো ভাই আবদুস ছামাদকে সঙ্গে নিয়ে যান। চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাওয়ার পর তার কোনো বক্তব্য না শুনেই চেয়ারম্যান রড দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি চেয়ারম্যানের পায়ে ধরে ক্ষমা চান এবং পরে সেখানে উপস্থিত তার মেয়ে চিৎকার করেও তাকে রক্ষা করতে পারেনি। এ সময় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামসহ অন্যান্য লোকজনও চেয়ারম্যানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পর দিন আহত ওই শিক্ষককে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরের দিকে আহত ওই শিক্ষক কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে চেয়ারম্যানের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযোগের বিষয়টি তদারকি করতে থানায় আসেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. সাখাওয়াত হোসেন। এর কিছুক্ষণ পর মামলাটি এফআইআর করা হয়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আহত মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, আমি জাতীয় আযান প্রতিযোগিতায় একাধিকবার প্রথম হয়েছি। একটি মাদরাসার শিক্ষক। আমার কোনো বক্তব্য না শুনেই চেয়ারম্যান আমার মেয়েসহ অন্যান্যদের সামনেই আমাকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে পুরো শরীর রক্তাক্ত করেছেন। ঘটনার পর এলাকার কিছু লোক এবং মিডিয়ার সাংবাদিক ছাড়া কেউ আমার পাশে ছিল না।
মামলা রেকর্ডে সহায়তার জন্য তিনি কুমিল্লার পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এবং থানার ওসি জহিরুল আনোয়ারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি অবিলম্বে ওই চেয়ারম্যানের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
Advertisement
এদিকে ওই চেয়ারম্যান কর্তৃক এর আগে একই ইউনিয়নের উখাড়ী গ্রামের আরিফুর রহমান (১১), মরিচা নোয়াপাড়া গ্রামের আবদুর কুদ্দুস (৬০), তার স্ত্রী পারভীন বেগম (৫০), ছেলে আবদুল খালেক (৩০), এবং গাংচর গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৬০) ও তার মেয়ে শেফালী আক্তারকে (৩৫) পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় থানায় গত মঙ্গলবার পৃথক আরও ৩টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে বলে ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
দেবিদ্বার থানা পুলিশের ওসি মো. জহিরুল আনোয়ার জানান, আহত মাদরাসা শিক্ষক বাদী হয়ে তার দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে রড দিয়ে পিটিয়ে হাড় ভাঙার জখমসহ হত্যার চেষ্টার সংশ্লিষ্ট ধারায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলাটি সন্ধ্যায় থানায় এফআইআরভুক্ত হয়েছে। চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে অভিযান চালাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
মো. কামাল উদ্দিন/এমএএস/পিআর