ধর্ম

যেভাবে ফরজ হয়েছিল রমজানের রোজা

রোজা মুমিন মুসলমানের ওপর ফরজ ইবাদত। পুরো রমজান মাস রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা। যুগে যুগে নবি-রাসুলদের ওপরও রোজা পালন করা ছিল আবশ্যক। সে ধারাবাহিকতায় মুসলিম উম্মাহর জন্যও রোজা ফরজ। আল্লাহ তাআলা সে কথা কুরআনে উল্লেখ করেছেন-يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

Advertisement

ফরজ হওয়ার আগে বিশ্বনবির রোজামদিনায় হিজরতের আগে মুসলমানদের জন্য রোজা ফরজ ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করার পর শুধু আশুরার (মহররম মাসের ১০ তারিখের) রোজা রাখতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর লক্ষ্য করলেন মদিনার ইয়াহুদিরা মুহররমের ১০ তারিখ রোজা পালন করছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সা্ল্লাম তাদের কাছে এ রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললো-আমাদে নবি হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আর ফেরাউন দলবলসহ ধ্বংস হয়েছিলেন। এ জন্য আমরা এ দিনে রোজা রাখি।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমিই এর অগ্রগণ্য।’ অর্থাৎ এ রোজা পালনের হকদার আমিই বেশি।

Advertisement

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহররমের ১০ তারিখ আশুরার রোজা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।

কুরাইশদের রোজাপ্রাক ইসলামি যুগে আরবের লোকেরাও রোজা পালনে সক্রিয় ছিল। মক্কার কুরাইশরাও অন্ধকার যুগে ১০ মহররম রোজা রাখতো। এ দিন তারা রোজা অবস্থায় পবিত্র কাবা শরিফে নতুন কিসওয়া বা গিলাফ পরিধান করাতো। (মুসনাদে আহমদ)

রমজানের আগে ফরজ হওয়ার আগেরমজানে রোজা ফরজ হওয়ার আগে কোনো রোজা ফরজ ছিল কিনা তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল আবার কেউ কেউ বলেন, আইয়্যামে বিজের রোজা তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল।

রমজানের রোজার পালনের নির্দেশমদিনায় দ্বিতীয় হিজরির ১০ শাবান মুমিন মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ হয়। আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন-شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْءَانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلٰى مَا هَدٰىكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ‘রমজান মাস, এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে কুরআন। মানুষের জন্য হেদায়েত, সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী।

Advertisement

অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা পালন করে। তবে কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা সফরে থাকলে এ সংখ্যা অন্য সময় পূরণ করবে।

আল্লাহ চান তোমাদের জন্য যা সহজ তা, আর তিনি চান না তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা, যেন তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো, তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার জন্য এবং যেন তোমরা শুকরিয়া আদায় করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

এরপর থেকেই মুসলিম উম্মাহর প্রতি পুরো রমজান মাস রোজ ফরজ হয়ে যায়। সে থেকে মুমিন মুসলমান মাসব্যাপী রোজা পালন করে আসছেন।

যদিও রোজা ফরজ হওয়ার পরপর ইসলামের প্রাথমিক যুগে রোজা পালন ছিল শিথিলযোগ্য। সে সময় যার ইচ্ছা রোজা পালন করতো। আবার যে কেউ ইচ্ছা করলে রোজার পরিবর্তে একজন গরিবকে খাওয়ার খাওয়াতো। এরপর ধীরে ধীরে মানুষ যখন রোজা রাখতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন অসুস্থ ও মাজুর ব্যক্তি ব্যতীত অন সব জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য রোজা পালন আবশ্যক হয়ে যায়।

রোজা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। মুমিন মুসলমান আল্লাহর হুকুম পালনে মাসব্যাপী রোজা পালন করবে। অর্জন করবে আল্লাহর নৈকট্য ও ভয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ হক আদায় করে রমজানের রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ