১৯৮৬ সালে 'নতুন মুখের সন্ধানে' প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সম্পৃক্ত হন আজকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক অমিত হাসান। তার পারিবারিক নাম খন্দকার সাইফুর রহমান। ডাক নাম আজু।
Advertisement
১৯৯০ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র 'চেতনা'। ছবিটি পরিচালনা করেন ছটকু আহমেদ। একক নায়ক হিসেবে তিনি প্রথম অভিনয় করেন মনোয়ার খোকনের 'জ্যোতি' চলচ্চিত্রে।
সেই দশকে তিনি শেষ ঠিকানা, জিদ্দী, বিদ্রোহী প্রেমিক, তুমি শুধু তুমি, বাবা কেন চাকর, রঙিন উজান ভাটি, ভালবাসার ঘর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন।
এরপর নতুন দশকে এসে অমিত হাসান কখনো নায়ক কখনো বা ভিলেন হিসেবে পর্দায় হাজির হয়েছেন। এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ শাহ আলম মন্ডল পরিচালিত 'ডনগিরি’ ছবি মুক্তি পায়।
Advertisement
বর্তমানে করোনার জেরে পরিবার নিয়ে নিজ গৃহে অবস্থান করছেন অমিত হাসান। তার অভিনয় এবং সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সঙ্গে ছিলেন অরণ্য শোয়েব-
জাগো নিউজ : এখন সময় কাটছে কিভাবে?অমিত : গত মাসের ২৩ তারিখ থেকেই বাসায় অবস্থান করছি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটছে। নামাজ পড়ছি, বই পড়ছি। এছাড়া ব্যায়াম করছি আরো একটু নিজেকে ফিট করার জন্য। আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ নিচ্ছি এবং এফডিসি ও ফিল্ম ক্লাবের সদস্যদের খোঁজ খবর রাখছি। কার কি সমস্যা আছে খবর নিচ্ছি।
জাগো নিউজ : করোনা প্রভাবের আগে ব্যস্ততা কি ছিলো?অমিত : শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত 'বিক্ষোভ' শিরোনামের একটি সিনেমায় কাজ করেছি। ফিল্ম ক্লাবের কিছু কাজ নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম সম্প্রতি। নতুন দায়িত্ব, অনেক কিছু সামলাতে হয়।
করোনায় সব স্থবির হয়ে গেছে। সিনেমাপাড়াতেও হা হুতাশ চলছে কর্মহীনদের মাঝে। এই ভাইরাসের অরভাবে সামগ্রিকভাবে ফিল্মের যে ক্ষতি হলো তা কীভাবে দেখছেন?অমিত : শুধু যে ফিল্মের ক্ষতি হয়েছে তা কিন্তু নয়। ক্ষতি হয়েছে সব সেক্টরেই। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে সময়ও লাগবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যে সিনেমা গুলো মুক্তির অপেক্ষায় আছে সেগুলোর মার্কেটিং একটু জোরালোভাবে করতে হবে। ঠিক সময়ে যাতে করে মুক্তি পেতে পারে সেটিও খেয়াল করতে হবে। হল মালিলদের আন্তরিকতা লাগবে দর্শক হলে আনতে। বিশেষ করে প্রযোজকদের হাত বাড়াতে হবে। আর শিল্পী-নির্মাতা ও কলাকুশলীদের উচিত হবে প্রযোজকের পাশে দাঁড়ানো।
Advertisement
আসলে হল মালিক থেকে শুরু করে সবাইকে হেল্পফুল হতে হবে। কারণ এই করোনা সারা বিশ্বেই মন্দা দিয়ে যাবে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।
জাগো নিউজ : অনেক তারকাই নিজ উদ্যোগ এই সময়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য নানাভাবে অবদান রাখছেন.....অমিত : আমিও রাখছি। তবে এটি আমি জনসম্মুখে কেন বলবো? কাউকে সাহায্য করলে সেটি গোপনভাবে করা উচিত। আমি কোনো ছবি দেইনি বলে যে সাহায্য করিনি এটা যদি কেউ ভাবে তাহলে ভাবুক। আমি বরাবরই গোপনভাবে সাহায্য করে আসছি। আগে আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ নিয়েছি, এরপরে আমার নিজের এলাকায় খোঁজ নিয়েছি ও আমার বর্তমান ঠিকানায় মানুষদের খবরও নিয়েছি।
আশে-পাশে লোকজনদের তো সাহায্য করেছি এবং সামনেও করবো। এছাড়া ফিল্ম ক্লাবের উদ্যোগে কিছু করার চিন্তা ভাবনাও করে রেখেছি। কিছু সদ্যদের জন্য এবং বাইরের লোকদের জন্যও কাজ করবো। বর্তমানে এটি নিয়ে আলাপ চলছে।
জাগো নিউজ : সাহায্যের ছবি অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে অবমুক্ত করেন। বিষয়টি তাহলে ভাল নয় বলছেন?অমিত : এখানে নেগেটিভ পজেটিভ দুটো দিকই রয়েছে। যে যেভাবে দেখে। পজেটিভ দিকটা হচ্ছে আপনি যদি আপনার দানের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়াতে উত্থাপন করেন তাহলে সেটি থেকে অনুপ্রাণিত হবেন অনেকেই। নেগেটিভ দিকটা হচ্ছে অল্প কিছু আহারের জন্য অনেকেই আসেন ত্রাণ নিতে। যখন সেটি ছবিতে চলে আসে তখন কিন্তু যে ব্যক্তি ত্রাণ নিচ্ছেন সে লজ্জিত হচ্ছে সবার কাছে। এই ব্যাপারটি আবার কিন্তু ভালো না।
জাগো নিউজ : করোনা থেকে মুক্তির জন্য আপনি কী কী নিয়ম মানছেন। ভক্তদের জন্য বলুন......অমিত : প্রথমত ঘরে থাকছি। এটা তো এখন মহামারীতে রূপান্তরিত হয়েছে কাজেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সরকার যেসব করণীয় ও বিধি মেনে চলতে বলেছেন সেসব মেনে চলার চেষ্টা করছি। সবসময় পরিষ্কার পরিছন্ন থাকার চেষ্টা করছি এবং যে সমস্ত বিষয় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শংকা বাড়ায় পারে সেগুলো থেকে বিরত থাকছি। মোট কথা সতর্ক থাকছি।
দেখুন এই করোনা হলো প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি অন্যায়ের নির্মম জবাব। তবে আমরা সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি। নিশ্চয়ই আল্লাহ গজব থেকে আমাদের মুক্তি দেবেন। তার কাছে মাফ চাওয়া ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই। দিনে রাতে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের ক্ষমা করেন।
জাগো নিউজ : আবারও আপনার ক্যারিয়ারে ফিরতে চাই। আপনার অভিনীত কি কি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে?অমিত : শাহীন সুমন পরিচালিত 'বিদ্রোহী' ছবিটি মুক্তি পাবে চলতি বছর। এছাড়া মাই ডার্লিং, বিক্ষোভ ও মাই লাভসহ বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আরও কিছু ছবির শুটিং চলছিল।
ঠিক সময়ে ছবিগুলো ভালো মার্কেটিং করে মুক্তি দিতে পারলে ভালো কিছু হবে আশা করছি।
জাগো নিউজ : আপনার 'টেলিভিউ' নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আছে। শোনা যাচ্ছে সেটি থেকে আবারও সিনেমা বানাতে চলেছেন?অমিত : এই সংস্থা থেকে আমার প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র 'কে আপন কে পর'। শাহীন-সুমন পরিচালিত চলচ্চিত্রটি ২০১১ সালে মুক্তি পায়।এই ছবিতে আমি অভিনয় করেছি এবং অপু বিশ্বাস। এছাড়া ছবিতে আরও অভিনয় করেন আলমগীর, ববিতা, মিজু আহমেদ, মিশা সওদাগর প্রমুখ। এই ছবিতে আলমগীর সাহেব ও ববিতা আপা অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ও অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর বেশ কিছু বছর ধরেই বন্ধ আছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এই বছরেই একটা প্লানিং ছিল। ইচ্ছে ছিল একটি ছবি করবো। পপি ও শাকিব খানের সঙ্গে কথাও বলেছিলাম মৌখিকভাবে।
কিন্তু সেটি নিয়ে নিশ্চিত করে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক আগে। দেখা যাবে ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে।
এলএ/এমএবি/এমএস