অর্থনীতি

মরিচের কেজি ২০ টাকা!

‘আধা কেজি ১০, এক কেজি ২০ টাকা। পানির দামে লইয়া যান মরিচ।’ এভাবেই হাঁক ডেকে রাস্তার পাশে অস্থায়ী ভ্যানে করে মরিচ বিক্রি করছেন রহিম মোল্লা নামের এক বিক্রেতা। মরিচের সঙ্গে করলা আর বেগুন বিক্রি করছেন তিনি।

Advertisement

রাজধানীর মুগদা এলাকায় এ সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘ভাইরাসের (করোনাভাইরাস) কারণে রাস্তায় লোক কম। মাল আছে ক্রেতা নাই। তাই দামও কম। কাঁচামরিচ ২০ টাকা। করলা ২০ টাকা আর বেগুন ১৫ টাকা। এর চেয়ে আর কত কম দাম চায় মানুষ?’ মানুষ কম বিক্রিও কম জানিয়ে এ সবজি বিক্রেতা জানান, ভোরে গিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে মাল (সবজি) নিয়ে আসি। এরপর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে বিক্রি করতে হয়। কারণ ১টার পর থেকেই রাস্তা খালি হতে থাকে। ২টার পর পুলিশ আর রাস্তায় থাকতে দেয় না। এ সময়ের মধ্যে সব মাল বিক্রি করতে হয়।

তিনি বলেন, কাঁচামাল ঘরে রাখা যায় না, রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তাড়াতাড়ি বিক্রির জন্য কম মাল আনি। তারপরও বিক্রি হয় না বলে জানান এ বিক্রেতা।

করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। চলছে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি। খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। ফলে বাজারগুলোতে আগের তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা কম। তাই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির দাম কম বলছেন বিক্রেতারা।

Advertisement

শুধু কাঁচামরিচ, করলা বা বেগুন নয়, কমেছে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম। তবে আগের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। কয়েক দফা বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও, মুগদা, মানিকনগর, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

বুধবার বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ও শিম ২০ টাকা, টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকা, মুলা ১০ থেকে ১৫ টাকা, পটল ২০ টাকা, শসা ও খিরা ১৫-২০ টাকা, ধুন্দল, ঝিঙে ২০, পেঁপে ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার পিস ১৫-২০ টাকা, বরবটি ২৪ থেকে ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ১৫-২০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাক। তবে আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। প্রতি হালি মানভেদে লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

প্রতি আঁটি লাউ শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাক ১০ টাকা আর ডাটা শাক ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে গত কয়েকদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, আজকের বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।

Advertisement

খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মিজান জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আজকে আড়তেই কেনা পড়েছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। গাড়িভাড়া খরচ মিলিয়ে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা পড়ে গেছে। কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করছি। তিনি বলেন, আড়তে দাম কম থাকলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি। গত সপ্তাহে ৩৫ টাকাও বিক্রি করেছি। এখন কেনা বেশি তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।

ক্রেতা কম থাকায় বাজারে সব ধরনের মাছের দাম আগের চেয়ে কম। কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে দাবি করছেন মাছ বিক্রেতারা।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি রুই আকারভেদে ২৫০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০-১৬০, আইড় ৩৫০-৪০০ টাকা, মেনি মাছ ৩৫০- ৪০০, বাইলা মাছ প্রকারভেদে ৩৬০-৫০০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বাইন মাছ ৪০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৫০০-৬০০ টাকা, পুঁটি ১৮০-২০০ টাকা, পোয়া ৩৬০-৪০০ টাকা, পাবদা ৩০০-৪০০ টাকা, বোয়াল, শিং, দেশি মাগুর ৪০০-৫০০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১২০-১৫০ টাকা, চাষের কৈ ১৮০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৭০০ থে‌কে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ৪৫০ থে‌কে ৫৫০ টাকায়। আর এক কেজি ওজনের বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। গরুর মাংস কেজি ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা, ছাগল ও ভেড়ার মাংস ৬৫০ এবং খাসির মাংস ৭০০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির ১১০ থেকে ১২০ টাকা, কক মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি আর ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ২৪-২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আবু সাইদ নামের এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাইরাসের কারণে বাইরে বের হই না। কিন্তু খাবার তো খেতে হয়। মাছ-সবজি কিনতে এসেছি। সবজির দাম কম। তবে মাছের দাম তেমন কমেনি।’

পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ক্রেতা বলেন, এক সপ্তাহে ব্যবধানে আবারও ২০ টাকা বেশি দামে কিনতে হলো। কারণ কী? সুযোগ পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারকে বিষয়টি এখনই দেখা উচিত বলেন এ ক্রেতা।

এসআই/এসআর/পিআর