করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে পরীক্ষার কোনও বিকল্প নেই। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করলেও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো অনেক উন্নত দেশও পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ ঠিক বিপরীত চিত্র উহানে। চীনের এ শহরেই প্রথমবার পাওয়া গিয়েছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। মাত্র তিনমাসের মধ্যেই মহামারি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এনেছে তারা। কীভাবে? অবশ্যই ব্যাপক হারে পরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে।
Advertisement
উহানে করোনা টেস্ট কতটা সহজ, দ্রুত ও কম খরচে করা যায় তা উঠে এসেছে ব্রেন্ডা গোহ নামে এক কলামিস্টের লেখায়।
মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত কলামে তিনি বলেন, আমি ও আমার এক সহকর্মী মাত্র মধ্যবর্তী শহরে (হুবেই প্রদেশের কেন্দ্র ও রাজধানী) উহানে পৌঁছেছি, বিদেশি হওয়ায় করোনা আক্রান্ত কি না তা নিশ্চিত করতে আমাকে নিউক্লিয়িক টেস্ট করাতে বলা হলো।
একজন সরকারি কর্মকর্তা আমাকে পরীক্ষার জায়গায় নিয়ে গেলেন। বন্ধ হোটেলের প্রবেশদ্বারের বাইরে একটাই টেবিল। মাত্র একজন মেডিকেল কর্মী বসা ছিলেন সেখানে, সারা গায়ে হ্যাজম্যাট স্যুট, চোখে গগলস (চশমা)।
Advertisement
তিনি আমাকে বসতে বললেন ও ব্যক্তিগত বিবরণ জানতে চাইলেন। এরপর তিনি আমার গলার মধ্যে একটি সোয়াব (শোষক বস্তু) ঢুকালেন, প্রায় আমার কণ্ঠরোধ করে ফেলেছিলেন, এরপরই কাজ শেষ। ওই কর্মকর্তা বললেন, পরীক্ষার ফলাফল দেড় দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
পরীক্ষাটা খুব একটা সুখকর না হলেও এতে সময় লেগেছিল তিন সেকেন্ডেরও কম।
গত সপ্তাহে টানা ৭৬ দিনের লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকেই গণহারে করোনা টেস্ট করা শুরু করেছে উহান কর্তৃপক্ষ। ‘নিউক্লিয়িক অ্যাসিড টেস্ট’ শব্দটি অনেকটাই পরিচিত হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের কাছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের কাজে যোগ দেয়ার আগে এই টেস্ট করাতে বলছে, যদিও তা এখনও বাধ্যতামূলক নয়।
উহানের এক হাসপাতালে করোনা টেস্ট করাতে মানুষদের শুধু একটি টেস্টটিউবে থুতু ফেললেই হচ্ছে। এই পরীক্ষায় খরচ হচ্ছে মাত্র ২৬০ ইউয়ান (৩ হাজার ১১৬ টাকা প্রায়)। আর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল অ্যাপেই।
Advertisement
সরকারি হিসাব অনুসারে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত উহানে অন্তত ৯ লাখ ৩০ হাজার ৩১৫ জনের করোনা টেস্ট করানো হয়েছে।
যথাযথতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও গোটা চীন জুড়েই নিউক্লিয়িক অ্যাসিড টেস্টের পরিধি আরও বাড়ানো ও দ্রুত করার পরামর্শ দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। এমনকি রোগীদের হাসপাতাল থেকে ছাড়ার আগে অন্তত দুই থেকে তিনবার নিউক্লিয়িক টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলছেন কিছু চিকিৎসক।
বেইজিংয়ের মতো অনেক শহরই বহিরাগতদের শারীরিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। তবে পুরো চীনে এই ব্যবস্থা চালু হবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়।
পরিশেষে, কর্মকর্তারা আমার করোনা টেস্টের ফলাফল পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেটা নেগেটিভ এসেছে।
কেএএ/এমকেএইচ