বিশেষ প্রতিবেদন

নিউমার্কেট ডাকঘরে প্রবেশপথের বিড়ম্বনা

হাল আমলের তথ্যপ্রযুক্তির ই-মেইল, ইন্টারনেটের যুগে ডাকঘরে (পোস্ট অফিস) আগের সেই ব্যস্ততা আর নেই। রাজধানীতে যে কয়েকটি ডাকঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো বিভিন্ন ডাক সংক্রান্ত কাজ নিয়ে সদাব্যস্ত সময় কাটান তার মধ্যে নিউমার্কেট ডাকঘর অন্যতম। সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয়, রেজিস্টার্ড চিঠি দেশ-বিদেশে পার্সেলসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এ ডাকঘরটিতে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১২শ’ গ্রাহক আসেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত সচিব পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দিনমজুর রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় দিনভর মুখরিত থাকে নিউমাকেটের এ ডাকঘর। ব্যস্ততম এ ডাকঘরটিতে প্রয়োজনীয় কাজ করতে এসে নিত্যদিন গ্রাহকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে- প্রবেশপথেই ড্রেনের উপচে পড়া মলমূত্র, ময়লা-নোংরা ও আবর্জনাযুক্ত পানি জমে রয়েছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। গ্রাহকরা নাকেমুখে রুমাল চেপে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। প্রবেশমুখের দেয়াল ঘেষে কিছুটা জায়গা থাকলেও সেখানে অবৈধভাবে জায়গা দখল করে আছেন ভাসমান দোকানদার। ফলে শত শত গ্রাহককে মলমূত্র মিশ্রিত পানি মাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। কেউ কেউ ময়লা আবর্জনা না মাড়ানোর হাত থেকে রক্ষা পেতে সামান্য কয়েকগজ জায়গা পার হতে রিকশা ভাড়া করতে বাধ্য হন। গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে- বিগত কয়েকমাস যাবত ডাকঘরের মূল প্রবেশমুখেই মলমূত্র মিশ্রিত পানি জমে থাকলেও সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের। তারা জানান, নিউমার্কেটে প্রতিদিন সকাল বেলা পাইকারি মাছের বাজার বসে। এছাড়া ডাকঘরের আশেপাশে বসে মাছ, মুরগী ও মাংসের বাজার। প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য রাস্তায় ফেলার ফলে ময়লা আবর্জনা ড্রেনে উপচে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডাকঘরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, প্রতিদিনই গ্রাহকরা ডাকঘরে প্রবেশ করে তাদের প্রতি খেদোক্তি প্রকাশ করেন। মেজাজ খারাপ করে কেউ কেউ গালমন্দ করেন। কিন্তু তারা বুঝতে চাননা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার ও ভাসমান দোকানপাট অপসারণ আমাদের নয় সিটি কর্পোরেশনের কাজ। আজিমপুর মিনা ডেন্টাল কেয়ারের ডা. সেলিমা আহমেদ মঙ্গলবার পোস্ট অফিসে কাজে এসেছিলেন। মঙ্গলবার নিউমার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধের দিন থাকায় ফেরার পথে পোস্ট অফিসের সামনে কোন রিকশা না পেয়ে হতবিহবল হয়ে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন।এ সময় পোস্ট অফিসের ভেতর থেকে এক ভদ্রলোক প্রাইভেট কার নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ডা. সেলিমা ভদ্রলোককে ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানির সামান্য পথটুকু গাড়িতে পার করে দিতে বিনীত অনুরোধ জানান। ভদ্রলোক ইতস্তত হলেও ভদ্রতার খাতিরে তাকে গাড়িতে করে জায়গাটুকু পার করে দেন। গ্রিন রোডের ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা তালুকদার সঞ্চয়পত্রের লাভ তুলে যাওয়ার পথে খেদোক্তি প্রকাশ করে বলেন, যানজটে নাকাল নগরবাসী নিউমার্কেটের মতো গুরত্বপূর্ণ জায়গায় এহেন বিব্রতকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হবেন তা ভাবতে বড় কষ্ট হয়। নিউমার্কেট মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ার ইচ্ছে  থাকলেও দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি মাড়ানোর ফলে ওই মসজিদে নামাজ আদায় করা হলো না। সারওয়ার আলম নামে মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক জানান, গত সপ্তাহে তিনি তার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে রেজিস্টার্ড চিঠি পাঠাতে এসেছিলেন। ময়লা পানি দেখে তিনি পূর্বদিকের দেয়াল ঘেষে পার হওয়ার সময় ভাসমান চায়ের দোকান থেকে কে বা কারা কুরুচিপূর্ণ কথা বলে ওঠে।তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়র সাহেবরা মুখে বড় বড় কথা বললেও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাসমান দোকানদারদের উচ্ছেদে আগ্রহী হন না। এ কারণে পথ চলতে গিয়ে এক বাবাকে মেয়ের ব্যাপারে বাজে মন্তব্য শুনতে হয়। ৭০ বছর বয়সী এম জামান নামে আরেক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বলেন, নির্বাচনের আগে নগরপিতা উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিলেও জনদুর্ভোগ লাঘবে তাদের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনা। এমইউ/এসএইচএস/পিআর

Advertisement