মহাজোট সরকারের অন্যতম শরীক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। বর্তমানে বেসরকারি বিমান ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। বিদেশি নাগরিক হত্যার পর কূটনীতিক চাপ, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের উত্থান, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু।জাগো নিউজ : বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য?রাশেদ খান মেনন : বর্তমান অস্থির বিশ্বে পরিকল্পিতভাবে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর বাতিল করলো এবং এর পরপরেই সেদেশেও হতাহতের ঘটনা ঘটলো। জাগো নিউজ : তাহলে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে এমন উদ্বিগ্নতা বা আলোচনার কারণ কি?রাশেদ খান মেনন : নাগরিক উদ্বিগ্নতা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন অন্য কারণে। দেশে স্থিরতা অর্থাৎ শান্তি বিরাজ করছে। এমন সময় এই হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে ভিন্ন উদ্দেশ্যে এবং এটিই হচ্ছে আমাদের কাছে উদ্বেগের। দেশকে আবার অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করার উদ্দেশ্যেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে।জাগো নিউজ : যে দুই নাগরিক হত্যার শিকার হয়েছেন এতে বিরোধী পক্ষ কি সুবিধা নিতে পারে?রাশেদ খান মেনন : জ্বালাও-পোড়াও আর পেট্রলবোমার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ হত্যা করলেও বিরোধী জোট বিশেষ কোনো সুবিধা নিতে পারেনি। বিদেশি নাগরিক হত্যা করে এবার সেই সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। উদ্বেগের অন্যতম কারণ হচ্ছে, হত্যার পরপরই অতিদ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা নিয়ে। এটি আমাদের অবাক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনারও ব্যাপার থেকে যায়। এমন একটি ঘটনার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল কূটনীতিক পাড়ার পুলিশের পক্ষ থেকেও।জাগো নিউজ : আপনি বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। গণমাধ্যমে তো আইএস-এর কথা প্রকাশ পাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রও তেমনটি ইঙ্গিত দিয়েছে?রাশেদ খান মেনন : যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এখন বলছে, সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের সামর্থ্য আছে। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থানের আশঙ্কা অমূলক নয়। জঙ্গি উত্থানের ক্ষেত্র হতেই পারে বাংলাদেশ।বাংলাদেশে জঙ্গিরা অবদমিত অবস্থায় আছে। আইএস-এর ঘটনায় তারা নতুন করে উৎসাহ-উদ্দীপনা পাচ্ছে।আদর্শিক কারণেও বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান হতে পারে। জেএমবি, হেফাজতের শক্তি থেকে এমনটি ধারণা করা যেতেই পারে।জাগো নিউজ : আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার কথা বললেন। এমন প্রতিক্রিয়ার কি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন?রাশেদ খান মেনন : তাদের এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কি কারণ থাকতে পারে আমার তা জানা নেই। কিন্তু কেউ না কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে এবং এর পূর্বাভাস কূটনীতিক পাড়া থেকে আগেই দেয়া হয়েছিল। পত্রিকাতেও এসেছে।জাগো নিউজ : আইএস-এর উত্থান ঠেকাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তার এই ঘোষণা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?রাশেদ খান মেনন : যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে সর্প হয়ে দংশন করা, ওঝা হয়ে ঝাড়া। এটি আমেরিকার পররাষ্ট্রেরও মূলনীতি। সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ভালো কথা। কিন্তু বাংলাদেশে সন্ত্রাস তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সহায়তা আমরা চাই না। এটি কোনো দিনই হতে দেয়া হবে না। দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ার কোনো সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাগো নিউজ : এটি তো বিশ্ব চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?রাশেদ খান মেনন : আমি তাই মনে করি। দেশের গণমানুষ যুক্তরাষ্ট্রের এমন সহায়তা চায় না বলেই মনে করি। সন্ত্রাস তৈরি করে, তা নিধনের নামে যা ইচ্ছা তাই এদেশের মানুষ করতে দেবে না। বাঙালি ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত।জাগো নিউজ : সরকার কূটনীতিক চাপের মুখে রয়েছে কি-না? ক্রিকেট দলগুলোও বাংলাদেশ সফর বাতিল করছে?রাশেদ খান মেনন : এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কূটনীতিকরা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন, তা অতিরিক্ত। বাংলাদেশ এ রকম উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। আগে মাসের পর মাস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থেকেছে, এখন তা থাকছে না। সব স্বাভাবিক হবে বলেই বিশ্বাস করি।বাংলাদেশ আজ নিজের হাতে ভাগ্য গড়ছে। কারো অনুগ্রহে বা করুণায় বাংলাদেশ তার ভাগ্য নির্ধারণ করতে চায় না। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাই হচ্ছে আমাদের অর্জন। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্য দিয়েই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ জায়গা করে নিচ্ছে।জাগো নিউজ : আপনি বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলছিলেন, এর ভিত্তি কি?রাশেদ খান মেনন : লন্ডনে বাংলাদেশি যে তরুণটি বসে আছেন, তার পক্ষে এ ধরনের কাজ করা খুবই সহজ। তিন মাস আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করে তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। জাগো নিউজ : সরকার তো বলে ওই আন্দোলনে বিএনপি-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?রাশেদ খান মেনন : হ্যাঁ, ওই আন্দোলন বিএনপিকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে। এতে দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। জাগো নিউজ : এটি বিএনপিরও বুঝতে পারার কথা?রাশেদ খান মেনন : চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। নইলে লন্ডনে বসে এই তরুণ জাতির জনকের বিরুদ্ধে কটূক্তিসহ নানা ষড়যন্ত্রমূলক কথা বলবে কেন? এই নষ্ট তারুণ্য বাংলাদেশকে বহু ভুগিয়েছে, সামনে আরো ভোগাবে।জাগো নিউজ : এই ভোগান্তির শেষ কোথায় বলে মনে করেন?রাশেদ খান মেনন : স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্র-সমাজকে মূল্য দিতে হয়েছে। আজকের অবস্থানে আসতে চীনকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হয়েছে।জাগো নিউজ : ’৭১ সালে এমন মূল্য দিয়েই বাংলাদেশ, স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পরেও মূল্য নিয়ে কথা বলছি কেন?রাশেদ খান মেনন : বাঙালি হার মানেনি। নষ্ট তারুণ্যের বিপরীতেই ডিজিটাল বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছে। নষ্ট তারুণ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই দেশপ্রেমিক তরুণরা ২০০৮ সালে ভোট দিয়ে মহাজোটকে ক্ষমতায় এনেছে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ নষ্ট তারুণ্যের বিরুদ্ধে। এএসএস/আরএস/পিআর
Advertisement