দেশজুড়ে

সৌরভের মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের গুলিতে আহত শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভের দুই পায়ের ক্ষত ক্রমশই সেরে উঠছে। শিগগিরই সৌরভকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে চিকিৎসকরা জানালেও সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি তার আগামী দিনের চলার পথকে কতটা মসৃণ করবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। শিশুরা যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্ত বা কোনো অনিষ্ট তাদের কোমল মনে নিতে পারে না। এতে করে তার মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর সেখানে একটি নিরীহ শিশুকে কোনো কিছু বলা নেই কওয়া নেই ফিল্মি কায়দায় তার পায়ে তিনটি গুলি করা হলো। এরপর তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে নেয়া হয় তখনো সাংসদ লিটনের লোকজন অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখে। অনাকাঙ্খিতভাবে গুলি খেয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আর তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বাঁধা দেয়া হচ্ছে এতেও সে খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই দুঃসহ স্মৃতিগুলো তার মস্তিষ্কে থেকেই যাবে। ঘটনাগুলো তাকে মানসিকভাবে পীড়া দেবে। গুলিবিদ্ধের দুঃসহ সেই স্মৃতি সৌরভের কোমল মনে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন হয়ে যেন তাড়া করছে প্রতিনিয়ত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই শিশুটির মারাত্মক মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে, সামনে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কি না তা নিয়েও উদ্বিগ্ন সৌরভ। সৌরভ জানায়, সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। প্রস্ততি নিতে পারছি না। পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তার উৎকণ্ঠা। সৌরভের বাবা সাজু মিয়া জাগো নিউজকে জানান, মাঝে মাঝেই সৌরভ চুপ হয়ে যায়। এক মনে তাকিয়ে থাকে। কি যেন ভাবে। কারও সঙ্গে কথা বলে না। বেশ হাসিখুশি ছেলেটা আমার আগে এমন ছিল না। এ নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই সাজু মিয়ার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে বাড়িতে গিয়ে কি করবেন তাই ভাবছেন এখন। সাজু আরও জানান, এরই মধ্যে একদিন দুপুরে ঘুম থেকে চমকে ওঠে সৌরভ। জিজ্ঞাসা করলে সৌরভ জানায়, ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়েছে সে।জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. জ্যোতির্ময় রায় জাগো নিউজকে জানান, এ ধরনের আঘাতে সাধারণত শিশুদের মানসিক নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে সৌরভেরও মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। তার লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটবে, বড় হয়ে অপরাধী হয়ে ওঠার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে। তাই গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে স্বাভাবিক রাখতে তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। ওই চিকিৎসক আরও জানান, সৌরভের শরীরের ক্ষত সেরে উঠলেও মনের ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে সারা জীবন। সেই ক্ষত যেন তাকে ক্ষতবিক্ষত করতে না পারে, সে যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য চাই নিবিড় মানসিক পরিচর্যা। শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠলে সৌরভের মানসিক কাউন্সেলিং করা হবে বলেও তিনি জানান।রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের ইনচার্য সহকারী অধ্যাপক ডা. বাবলু কুমার সাহা জাগো নিউজকে জানান, সৌরভকে ধীরে ধীরে হাঁটানো হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শিগগির তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।এদিকে, সৌরভের মা সেলিনা বেগম জাগো নিউজকে জানান, মামলা চালানোতো দূরের কথা ছেলের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য তাদের নেই। সুদের উপর টাকা ঋণ নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শিশু সৌরভের বাবা সাজু মিয়ার অভিযোগ, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্বজনরা টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। উল্লেখ্য, প্রতিদিনের ন্যায় গত ২ অক্টোবর শুক্রবার ভোরে সৌরভ (১০) বাড়ির পাশে রাস্তায় হাঁটতে বের হয়। এসময় ওই পথ দিয়ে গাড়িতে করে সাংসদ লিটন বামনডাঙ্গাস্থ তার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। গোপালচরণ গ্রামের ব্র্যাক মোড় কালাইর ব্রিজ এলাকায় পৌঁছে হঠাৎ করে গাড়ি থেকে সৌরভকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়েন লিটন। এতে সৌরভের দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সে বর্তমানে হাসপাতালের পঞ্চম তলার ১৮নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।এমজেড/আরআইপি

Advertisement