গোপালগঞ্জে পৃথক দুই সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার বনগ্রাম ও মুকসুদপুর উপজেলার বাহাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।
Advertisement
জুয়া খেলায় বাধা দেয়ায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এবং পূর্বপাড়া ও মধ্যপাড়ার মধ্যে সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আজর ফকির (৫৫) নামে একজন নিহত হন। তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। এ সময় পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বনগ্রাম মধ্যপাড়ার হাফিজ সিকদারের লিজের মধ্যে কিছু দিন ধরে করপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব মোল্লার নেতৃত্বে জুয়ার আসর চলে আসছিল। ওই জুয়ার আসরে জেলার বাইরে থেকেও জুয়াড়িরা জুয়া খেলার জন্য আসেন। রোববার বিকেলে বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ার যুবকরা একত্রিত হয়ে জুয়ার আসর বন্ধ করার জন্য ওই লিজে গেলে জুয়াড়িরা পালিয়ে যায়।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বনগ্রাম পূর্বপাড়া ও মধ্যপাড়ার লোকজন একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোল্লাডাঙ্গা বিলের ধানক্ষেতের মধ্যে মহড়া দিতে থাকে। বিষয়টি বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ার লোকজনের নজরে এলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারাও প্রতিপক্ষকে হটাতে ওই বিলের মধ্যে সমবেত হয়। একপর্যায়ে দুই পড়ার লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
Advertisement
এ খবর পেয়ে বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বেশ কয়েক রাউন্ড রবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে করপাড়া বাজারের সিঙ্গাড়া ব্যবসায়ী আজর ফকির ঘটনাস্থলে নিহত হন।
আহতদের গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর ১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে মসজিদে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে জেলার মুকসুদপুরে বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে সুজন শেখ (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত তিনজন।
Advertisement
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাহাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মজিবর শেখের সঙ্গে ওই গ্রামের মতি মাতুব্বর ও ইব্রাহীম মাতুব্বরের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
রোববার মসজিদে এশার নামাজ পড়া নিয়ে মজিবর শেখের সঙ্গে মতি মাতুব্বর ও ইব্রাহীম মাতুব্বরের কথা কাটাকাটি হয়। সোমবার ফজরের নামাজ পড়ার সময় মসজিদের মধ্যে ওই দুই পক্ষ আবারও তর্কবিতর্কে লিপ্ত হয়। এ ঘটনার জেরে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় সুজন শেখ ঘটনাস্থলে নিহত হন। সুজন শেখ ওই গ্রামের মজিবর শেখের ছেলে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মুকসুদপুর থানার ওসি মির্জা আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখনও কোনো মামলা হয়নি।
হুমায়ূন কবীর/এফএ/জেআইএম