আন্তর্জাতিক

অর্থনীতি বাঁচিয়ে করোনার বিস্তার ঠেকানোর উপায় কী?

সারাবিশ্বে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ থেকে মানুষে সহজেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। সে কারণেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে বার বার সচেতন করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

বিভিন্ন দেশেই ইতোমধ্যে করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন চলছে। লোকজনকে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের না হওয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু এভাবে কোনো একটি দেশ বা সমাজকে লকডাউন করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই কোনো সমাধান নয় বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট এক অর্থনীতিবিদ। কানাডাভিত্তিক সিবিসি নিউজের ৬০ মিনিটস অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এ বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন ড্যানিস রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদ ড. বিয়র্ন লোমবোর্গ।

অর্থনীতির মন্দা না ঘটিয়েও কিভাবে করোনার বিস্তাররোধ করা যায় সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ৬০ মিনিটসকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বিয়র্ন লোমবোর্গ বলেন, ‘বাস্তবিকতা হচ্ছে আমরা যদি করোনার গতি রোধ করতে চাই তবে সমাজকে পুরোপুরি লকডাউন করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সম্ভবত এটা কোনো টেকসই সমাধান নয়।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘করোনারোধে আমাদের কতটা করা উচিত ? অপরদিকে আমরা অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বংস হওয়া থেকে কতটুকু এড়িয়ে যেতে পারি সে বিষয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে।’

ড. লোমবোর্গ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন যে, কোভিড-১৯ থেকে বর্তমান মৃত্যুহার কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে মৃত্যুহার আরও বাড়াতে পারে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ করা হচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে আসলে আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে এবং আমরা দীর্ঘমেয়াদে আরও বেশি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। জীবন বাঁচানোর সাফল্য অর্জন করতে গিয়ে আপনারা আসলে পুরো জনসংখ্যাকে দীর্ঘ মেয়াদে বেকারত্ব এবং অসন্তোষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের বলা উচিত যে, অনেক হয়েছে। আমরা যদি এটা চালিয়ে যেতে থাকি তাহলে আমরা আসলে অল্প কিছু মানুষকে বাঁচানোর চেয়ে অর্থনীতির আরও বেশি ক্ষতি করতে যাচ্ছি।

Advertisement

ড. লোমবোর্গ বলেন, এটা মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে কারণ আমরা ভাবছি আমাদের সবাইকে বাঁচানো উচিত। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, করোনারোধে আমাদের অনেক কিছুই করা উচিত। কিন্তু আমাদের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে তিনি সুইডেনের উদাহরণ টেনে এনেছেন।

করোনার বিস্তাররোধে ভিন্নধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছে সুইডেন। তারা পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে লকডাউন করেনি। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ ঘরেই অবস্থান করছে সেখানে সুইডেনের রাস্তা এখনও লোকজনে পরিপূর্ণ। ব্যবসা-বাণিজ্য আগের গতিতেই চলছে।

সেখানকার রেস্টুরেন্ট, বার এখনও চালুই আছে। এমনকি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। সুইডেনে সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তবে এটা করতে কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র বয়স্ক এবং দুর্বল লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু অন্য সবাই আগের মতোই চলাফেরা করছে।

সুইডেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিকায়েল ডেমবার্গ বলছেন, এখনই পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে লকডাউন করার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।

লোমবোর্গ বলছেন, সুইডিশ কর্তৃপক্ষ এখন আসলে যা করছে তা হচ্ছে তারা বর্তমান মৃত্যুকে মেনে নিচ্ছে কারণ এর ফলে ভবিষ্যত মৃত্যুহার কমে আসবে। একই সময়ে এটা অর্থনীতির ক্ষতিও কমিয়ে আনবে। করোনার ক্ষেত্রে এটাকেই প্রকৃত সমতা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

টিটিএন/পিআর